বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়েছেন জিদনী আক্তার
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দড়ি হাইরমারা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছোট মেয়ে মোসাম্মদ জিদনী আক্তার। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে জিদনী সবার ছোট। বাবার অভাবের সংসারে পড়ালেখা তো দূরের কথা নিজের জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়নি জিদনী। তারপরও নিজের চেষ্টায় ২০২০ সালে স্থানীয় ইউনুস মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তারপর আর পড়াশোনা এগোয়নি। অভাবের কারণে এসএসসি পাসের পর বাবা-মা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। এরই মধ্যে জিদনীর সংসারে আসে এক কন্যা সন্তান। তা নিয়েই সংসার চলছিল। কিন্তু এক সময় বিভিন্ন ঝামেলা শুরু হয়। পরবর্তীতে পারিবারিক কলহের কারণে জিদনীর সংসার ভেঙে যায়। জিদনী এখন তার কন্যা সন্তানসহ বাবার সংসারেই থাকেন।
এমতাবস্থায় বাবার সংসারে নিজেকে কাজে লাগাতে উপায় খুঁজছিলেন। এরই মধ্যে দড়ি হাইরমারা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত সাদত স্মৃতি পল্লী বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদানের আয়োজন করে। খবর পেয়ে জিদনী প্রশিক্ষণে অংশ নিতে নিজের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন। জিদনীর আগ্রহ দেখে তাকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পেয়ে মনোযোগ সহকারে সেলাই প্রশিক্ষণের কোর্সটি সম্পূর্ণ করেন। বর্তমানে তিনি নিজেই বিভিন্ন ধরনের জামা কাপড় কাটিং ও সেলাই করতে পারেন।
বাড়ির আশপাশে প্রায় বাড়িতেই সেলাই মেশিন থাকায় সেলাই কাজের সংকট আছে। তবুও জিদনী চেষ্টা করছেন নিজের মতো করতে। জিদনী এখন নিজের, নিজের বোনদের ও নিজের মেয়ের জামা কাপড় সেলাই করেন। তা ছাড়া মা ও চাচিদের কাপড় বানিয়ে দেন। সেলাই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত সেলাই কাজের মাধ্যমে ৪০০ টাকা আয় করতে পেরেছেন।
জিদনী বলেন, ‘আপাতত কাজ না পেলেও আমি আমার মেয়ের জন্য ৬টি প্যান্ট তৈরি করেছি। যা কিনতে গেলে কমপক্ষে ৫০ টাকা করে হলেও আমার ৩০০ টাকা খরচ হতো। অথচ আমার কোনো টাকাই খরচ হয়নি। এখন আমি আমার বোনদের জামা কাপড় তৈরি করে দিতে পারি। আমি আমার নিজের জন্য দুই সেট জামা তৈরি করেছি, যার সেলাই মূল্য কম করে হলেও দুই শত টাকা।’
সাদত স্মৃতি পল্লী থেকে মোসাম্মদ জিদনী আক্তারকে সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে একটি সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। জিদনী আক্তারের মা বলেন,‘ আমার মেয়ে আপনাদের আনতে সেলাই কাম শিখছে। এখন কাপড় বানাইতে পারে। আমার একটা পেটিকোট বানাইয়া দিছে। নিজের কাম নিজেই করতাছে এখন।’
জিদনী আক্তারের মতো আরও অনেক অসহায় নারীরা সাদত স্মৃতি পল্লী থেকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছে। শেলটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি পরিচালনা করে প্রথম আলো ট্রাস্ট।