মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষা দড়ি হাইরমারা গ্রাম। এই অঞ্চলের চরাঞ্চল গ্রামের মেয়ে ফাইমা আক্তার। স্থানীয় ইউনুছ মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে সে। সাদত স্মৃতি পল্লীর শিশু-বিকাশ কেন্দ্রেরও নিয়মিত শিক্ষার্থী ফাইমা। পড়াশোনার পাশাপাশি গান গাইতে পছন্দ করে সে। গায়কিও বেশ ভালো। গানের ক্লাসে নতুন গান ধরলে সহজেই রপ্ত করতে পারে সে। বর্তমানে ৫টি গান নিজেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাইতে পারে। গানগুলো হলো বিড়াল ছানা, ঝিক ঝিক ঝিক চলে রেল গাড়ি, আজব দেশের ধন্য রাজা, প্রজাপতি প্রজাপতি, লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া।
গানে যেমন আগ্রহ অনেক, তেমনি ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি এবং নাচের প্রতিও আগ্রহ কম নয়। কাগজ-কলম আর রং পেনসিল পেলেই বসে যায় ইচ্ছে মতো ছবি আঁকতে। তার খুব ভালো লাগে গ্রামীণ সবুজ গাছ-পালা, নদী, নৌকা ও প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। কবিতা আবৃত্তিতে রয়েছে তার ভালো দক্ষতা।
সাবলীল উচ্চারণে সে কবিতাকে প্রাণময় করে তুলতে পারে। নাচেও সে খুব ভালো। গ্রামের প্রবাসী ফারুক মিয়ার ২ মেয়ের মধ্যে সেই প্রথম। তার বাবা প্রায় ১৫ বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী। ২-৩ বছর পর পর সে তার বাবার দেখা পায়। এ ছাড়া তারা দুই বোনই বাবাকে কাছে পায় না। এ জন্য মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। ফাইমা প্রায় ৫ বছর ধরে সাদত স্মৃতি পল্লীর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী হিসেবে আসে। তার স্বপ্ন বড় হয়ে একদিন সেনা অফিসার হবে। কেন সেনা অফিসার হতে চাও? এমন প্রশ্নে সে বলে, ‘আমার দেশের স্বাধীনতা রক্ষা ও বিদেশিদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য আমি সেনা অফিসার হতে চাই।’
ফাইমার মা বলেন, ‘আমার ২ মেয়ে পড়ালেখা করে বড় হবে। তারা যা কিছুই হোক আমরা তার পাশে থাকব। তবে তারা ভালো মানুষ হোক এটাই আমরা চাই।’
তার মতো এমন আরও প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী সাদত স্মৃতি পল্লীর শিশু-বিকাশ কেন্দ্রে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসে। শিশু-বিকাশ কেন্দ্রে মূলত শিশুদের মানসিক বিকাশ ও তাদের মননের উৎকর্ষের জন্য বিনোদনমূলক কালচারাল শিক্ষা প্রদান করা হয়। শিশু-বিকাশ কেন্দ্রে শিশুদের ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষার ক্লাসের পরেই হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কনের ক্লাস, তারপর একে একে হয় গানের ক্লাস, নাচের ক্লাস ও অভিনয়ের ক্লাস। এসবই হয় সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার। প্রতি শনিবার কবিতা আবৃত্তি, গল্প বলা ও গল্প শোনা, নাচ ও গানের ক্লাস হয়। এই শিক্ষাগুলো সুবিধাবঞ্চিত দড়ি হাইরমারা গ্রামের শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈতনিক শিক্ষা। দড়ি হাইরমারা গ্রামের সাদত স্মৃতি পল্লীটি পরিচালনা করে প্রথম আলো ট্রাস্ট।