ত্রাণ পেয়ে খুশি নদীভাঙা মানুষ

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহে বন্যার্ত ও নদীভাঙা ২৫০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে ঘোগাদহ ইউনিয়নের খামার রসুলপুরেছবি প্রথম আলো

গ্রামের নাম রসুলপুর। তবে এটি গয়েরার মাঝিপাড়া হিসেবে পরিচিত। এ পাড়াতে বাস করত অন্তত ৬০ পরিবার। গ্রামটি পড়েছে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ও ঘোগাদহ ইউনিয়নের মাঝখানে। দুধকুমার নদের ভাঙনে গত এক সপ্তাহে এই পরিবারগুলোর অর্ধেক বাস্তুহারা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে যাত্রাপুর ঘাট থেকে নৌকায় করে এই মাঝিপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, শূন্য বাস্তুভিটায় বসে আছেন অর্ধশতাধিক নারী–পুরুষ। তাঁদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। ভাঙনকবলিত মানুষেরা

টিনের চালা করে আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের গ্রামে।

স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগিতায় আগে থেকেই এই ভাঙনকবলিত মানুষদের একটি তালিকা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই তালিকায় ছিল না মালেকা বেগমের নাম। ত্রাণের নৌকা দেখে মালেকা বেগম দৌড়ে এসে আকুতি জানালেন, তাঁকে যেন বাদ দেওয়া না হয়। কারণ, বুধবার তাঁর দুটি ঘরসহ বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। তাঁর পরিবার এখন খুব কষ্টে দিন পার করছে।

রসুলপুর গ্রামে মালেকা বেগমের মতো নদীভাঙনকবলিত ও বন্যার্ত ১৩০ পরিবারকে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি লবণ, এক কেজি পেঁয়াজ ও এক লিটার সয়াবিন তেল। খাদ্যসহায়তা পেয়ে মালেকা বানু বলেন, ‘টিউবওয়েলটাও নদীতে চলে গেছে। ঘরে চাল–ডাল কিছু নেই। খুবই উপকার হইল।’

ঘোগাদহের খামার রসুলপুরের হাজরা বেগমের দুঃখ কে শুনবে। তিনি ভুগছেন জরায়ু ক্যান্সারে। ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করেন। স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকেন। দিনমজুর স্বামীরও খুব বেশি আয় নেই। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সেখানে চিকিৎসার কথা কে চিন্তা করবে।

দুধকুমার নদের পারে বসবাস করা এ পরিবারটি শোকে–দুঃখে বিষণ্ন। প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এক প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী এ পরিবারটিকেও দেওয়া হয়। ত্রাণ পেয়ে খুশি হয় পরিবারটি।

খামার রসলপুরের বেশির ভাগ মানুষ নদীভাঙা। তাঁরা বাঁধের তীরে বসবাস করেন। কিন্তু এবারের বন্যায় কোনো সহায়তা পায়নি এমন ১২০টি পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণ পেয়ে ছলিমা বেগম বলেন, ‘খুউব খুশি হনুং। ৫০ টাকা চালের কেজি। আজ প্যাট (পেট) ভরে ভাত খামো।’

পাশে যাঁরা: আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকাসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্ট ৬ জুলাই পর্যন্ত ৩১ লাখ ৬ হাজার ১১৭ টাকা অনুদান গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে সিলেটের সাতটি, সুনামগঞ্জের চারটি, নেত্রকোনার চারটি উপজেলা ও কুড়িগ্রামের পাঁচটি ইউনিয়নের পাঁচটি চরে বন্যার্ত মানুষদের মধ্যে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। ব্যাংক হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপের ডোনেশনের মাধ্যমেও আপনার সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।