‘হখলে আইয়া যারে সামনে পায়, তারেই দেয়। তখন খেউ খেউ দুইবার, তিনবার পায়; আর খেউ একবারও পায় না। খেউ খালি হাতে বাড়ি ফিইরা যায়। তারার সিস্টেমটা ভালা লাগছে। আগে তালিকা কইরা বিতরণ করায় যার দরকার হেয় পাইছে।’
সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গতদের মধ্যে একটি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে এমন কথা বলছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মণিপুরি ঘাটের এক চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন তাঁরা। এর কাছেই নদীর পাড়ে একটি খোলা জায়গায় প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করছিলেন বন্ধুসভার সদস্যরা। গতকাল মোট ২০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রাণ নিতে আসা নারী-পুরুষ–শিশুরা আলাদা লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। সবার হাতে একটি কাগজে নম্বর লেখা টোকেন। আর বন্ধুসভার সুনামগঞ্জ শাখার উপদেষ্টা মো. রাজু আহমেদের হাতে নামের তালিকা। সেই তালিকা ধরে তিনি একটি একটি করে নাম বলছেন। আর ওই নামের যিনি হাত তুলছেন, তাঁর টোকেন চেক করে ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন বন্ধুসভার সদস্য রণজিৎ কুমার দে, প্রদীপ পাল, শাহিদুর রহমান, কনক চক্রবর্তী, জাকের আহমেদ ও রাজীব দে।
নদীর পাড়েই কথা হয় ৬০ বছর বয়সী মোনেম মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ত্রাণ আসছে প্রতিদিন। নদীর পাড়ে যারা থাকে, তাদের মধ্যে নৌকা থেকে বিতরণ করা হয়। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। যার প্রয়োজন, সে পায় না। আবার কখনো কখনো কাড়াকাড়ি শুরু হলে ত্রাণ বিতরণকারীরা বিতরণ শেষ না করেই নৌকা নিয়ে অন্যদিকে চলে যান। আজ (গতকাল) খুব সুন্দরভাবে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে।
বন্ধুসভার সদস্য ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে ত্রাণ কম পেয়েছে এমন এলাকা আগেই বাছাই করা হয়েছে। এসব এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে তালিকা করা হয়েছে। তালিকা ধরে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে টোকেন সরবরাহ করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে গতকাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এভাবেই দুই দিন ধরে সুনামগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। আরও দুই দিন বিতরণ করা হবে একইভাবে।
বন্যার পানি ঘর ছেড়েছে। ঘরদোর নতুন করে থাকার উপযোগী করার চেষ্টা করছেন স্থানীয় লোকজন। রান্নার ব্যবস্থা হয়েছে। তাই এসব পরিবারের জন্য রান্না করে খাওয়ার মতো পণ্য সরবরাহ করছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ইসমাইল হোসেনের (৮০) পরিবারে সাতজন মানুষ। বসতঘরটি বন্যার পানির তোড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। পরিবার নিয়ে পাশের গ্রামের এক বাড়িতে আছেন। জানালেন, ছেলে দীন ইসলাম শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। এখন কোনো কাজকাম নেই। তাই বড় কষ্টে আছেন। সামনে কীভাবে চলবেন, কীভাবে ঘর বানাবেন, এই নিয়ে চিন্তায় আছেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘এখন কেউ দিলে খাই, না দিলে উপাস দিন যায়। আজকু তোমারা খানি পাইটা মনটা জবর ভালা লাগের।’
পাশে যাঁরা: আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকাসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্ট ৩ জুলাই পর্যন্ত ৩০ লাখ ১৪ হাজার ৮৪০ টাকা অনুদান গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে সিলেটের ৭টি উপজেলা, সুনামগঞ্জের ৩টি উপজেলা, নেত্রকোনার ৩টি উপজেলা এবং কুড়িগ্রামে ২৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।