আলো ছড়াচ্ছে সত্যপ্রিয় পাঠাগার

পণ্ডিত সত্যপ্রিয় পাঠাগারে রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। ছবি: আব্দুল কুদ্দুসকক্সবাজারের শতবর্ষী ‘রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার’। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে বসতিসহ এর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। পরদিন উখিয়া ও টেকনাফের মন্দির ও বিহারেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক বছরের মাথায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকার ধ্বংসস্তূপের ওপর দৃষ্টিনন্দন ১৯টি বৌদ্ধবিহার তৈরি করে দেয়। ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামুতে এসে নতুন বিহারগুলোর উদ্বোধন করেন। কিন্তু বিহারগুলোর কোনোটিতে পাঠাগার না থাকায় হতাশ ছিলেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
সেই হতাশা দূর করতে এগিয়ে আসে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সীমা বিহারের তৃতীয় তলায় ৪০০ বর্গফুটের একটি কক্ষে স্থাপন করা হয় আধুনিক মানের পাঠাগার। ৪০ জন পাঠকের বসার উপযোগী পাঠাগারটিতে সরবরাহ করা হয় প্রায় ১ হাজার বই ও ইন্টারনেট-সংবলিত তিনটি কম্পিউটার। সীমা বিহারের অধ্যক্ষ, একুশে পদকপ্রাপ্ত ধর্মীয় গুরু সত্যপ্রিয় মহাথেরোর নামে পাঠাগারের নামকরণ করা হয় ‘পণ্ডিত সত্যপ্রিয় পাঠাগার’। ২০১৪ সালের ৬ মার্চ এ পাঠাগারের উদ্বোধন করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
গত ২৯ অক্টোবর বেলা ১১টায় পাঠাগারে গিয়ে দেখা যায়, ৩২ জন পাঠক বই-পত্রিকা পড়ছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু–কিশোর। একাত্তরের বীরযোদ্ধা বইটি পড়ছিল সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিন্নর সরকার। সে জানায়, ‘পাঠ্যবইতে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে লেখা পড়েছি। কিন্তু ভাষাশহীদদের ব্যাপারে আরও জানতে এই বই পড়ছি, যা বার্ষিক পরীক্ষায় কাজে লাগবে।’
১৮ বছরের তরুণ শ্রামন হ্লা মং মারমা বলেন, ‘লাইব্রেরিতে বইয়ের পাশাপাশি প্রথম আলো, সমকাল, দৈনিক কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পত্রিকা পড়া হয় নিয়মিত। পাঠাগারটি না থাকলে এলাকার অনেকে মাদক পাচারসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ত।’
১০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম বাংলাবাজার থেকে পাঠাগারে আসে রহমত উল্লাহ। এই তরুণ পড়ছিল রফিক আনোয়ারের গ্রন্থ জননীর মুক্তিযুদ্ধ। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, পাঠাগারে আসেন চাকরিজীবীরাও।
রামু ও এর আশপাশের ১২টি গ্রাম থেকে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠাগারে আসেন। পাঠাগারের পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, পাঠাগারের তালিকাভুক্ত সদস্যসংখ্যা ৩২০। এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
প্রতিদিন ২০০ থেকে ৫০০ জন দেশি–বিদেশি মানুষ এই বিহার ভ্রমণে আসেন। তাঁরা পাঠাগার পরিদর্শন করেন। গবেষণার জন্যও পাঠাগারে আসেন অনেকে।