ত্রাণের পাশাপাশি রান্না করা খাবার পেল বন্যার্তরা

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যার্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার ও পানিবাহিত রোগের ওষুধ বিতরণ করছেন বন্ধুসভার সদস্যরা। গতকাল কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার রামারবাগ গ্রামেছবি: এম সাদেক

বন্যায় ডুবেছে বাড়ি। অন্য অনেকের সঙ্গে ছয় দিন ধরে আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। চিড়া–মুড়ি খেয়েই কাটছিল দিন। রান্না করা খাবার পেয়ে তৃপ্তি মিটল বলে জানালেন জোসনা বেগম। মাঝবয়সী এই নারীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরে।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল শনিবার লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার ১ হাজার ২১০ জন বন্যার্তের মাঝে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। এ ছাড়া নোয়াখালী ও ফেনীতে বন্যার্ত ২৭০টি পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। গতকালের ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সহায়তায়।

বন্যার্তদের জন্য লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের চর পোরাগাছার রামগতি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। গতকাল সেখানে বন্যার্ত ৩১০ জনকে রান্না করা খাবার দেয় প্রথম আলো ট্রাস্ট। পশ্চিম চর কলাকোপা হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০০ বন্যার্ত পান ভাত, মুরগির মাংস ও আলু ঝোল, মসুর ডাল ও সবজি।

খাবার খেয়ে বকুল বেগম নামের এক নারী বলেন, ১২ দিন ধরে ঠিকমতো খেতে পারেননি। অনেক দিন পর আজ পেট ভরে খেয়েছেন।

প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা গতকাল কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার রামারবাগ গ্রামের বন্যার্ত ৩০০ জনের কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেন। খাবার খেয়ে জেসমিন আক্তার (৪০) নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘যখন হানি (পানি) অই, হেদিন থাই হুগনা (শুকনা) খাওন খাইতাছি, মুখ ব্যথা অই গেছে। বহুত দিন হরে রান্ধুইন্না (রান্না করা) খাওন হাইছি।’

একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হেলাল। তিনি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পানিতে তাঁর ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। রান্না করা খাবার খেয়ে বললেন, ‘যেদিন তুন বন্যা শুরু অই, হেদিন তুন আইজগাও ঘরে চুলা জ্বলিনে। কয় দিন হর রান্ধুইন্না কাওন হাইছি আল্লায় কইতারবো।’

গতকাল নোয়াখালী পৌরসভা, সোনাইমুড়ী উপজেলার মুহুরীঞ্জ, সদর উপজেলার কাদিহানিফ ও তিতারকান্দি এলাকায় বন্যার্ত ১৫০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

ত্রাণের প্যাকেট হাতে তিতারকান্দির নির্মাণশ্রমিক কফিল উদ্দিন বলেন, বন্যায় বেশ কয়েক দিন আয়রোজগার বন্ধ। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে। এই ত্রাণে কষ্ট কিছুটা হলেও দূর হলো।

একই গ্রামের চল্লিশোর্ধ নারী কোহিনুর বেগম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এত দিন ত্রাণ পাননি। যে ত্রাণ পেয়েছেন, বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েকে রান্না করে খাওয়াতে পারবেন।

গতকাল ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর চর মজলিশপুর, চর গোপালগাঁও ও ভাষাশহীদ সালামনগর এলাকা এবং ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার্ত ১২০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। নৌকা ও ভেলায় করে বানভাসি এসব পরিবারের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী; প্রতিনিধি, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর; সংবাদদাতা, কুমিল্লা]