‘এই প্রথম তোমরায় কম্বল দিলেন মোর খুব উপকার কইরলেন’

নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়।

 ‘খুব ঠান্ডা বায়, কোমর চলে না, ছাপুরি (কুঁজো হয়ে) বেড়াও। আগত একটা কম্বল পাছু, সেইটা ছিড়ি গেইছে, স্বামী ছাড়ি দিছে, মাইনষের বাড়িত ছিড়া দাগলী (ছেঁড়া কাঁথা) পড়ি থাকো, যে ডুডুয়া (শীত) ছিড়া দাগলী দিয়া জার কাটেছে না। কম্বল খান পায়া এলা গরম থাকির পারমো।’

মঙ্গলবার দুপুরে কম্বল হাতে পেয়ে এভাবে অনুভূতি প্রকাশ করেন, নীলাফামারী জেলার ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া হাইস্কুলপাড়া গ্রামের জুলেখা খাতুন (৭০)।

আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে কনকনে শীত উপেক্ষা করে ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কম্বল নিতে জড়ো হন শীতার্ত নারী পুরুষরা।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০০জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা ওই ইউনিয়নের উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পুর্বখাটুরিয়া, ডাঙ্গাপাড়া, জুগিরডাঙ্গাসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় দুঃস্থ শীতার্তদের তালিকা সংগ্রহ করেন।

লাঠির ওপর ভর দিয়ে কম্বল নিতে এসেছেন ইউনিয়নের উত্তর খাটুরিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম (৯০)। কম্বল হাতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘তিন বেলা খাবার পাও না, কম্বল কিনিম কি দিয়া, বাড়িত ঠান্ডা কাটের মতো দাগলীও(কাঁথা) নাই। মোর ছেলেগিলাও গরিব। ছেলেগিলাও নিজের ছাওয়াক গরম কাপড় দিবার পারে না। ঠান্ডাতে মোর হাত পাও কোকড়া হয়া গেইছে। এই প্রথম তোমরায় কম্বল দিলেন, মোর খুব উপকার কইরলেন।’

কম্বল হাতে পেয়ে পুর্বপাড়ার আব্দুল জব্বার (৭৫) বলেন, ‘কম্বল পায়া মোর খিব উপকার হইল বায়, কত জনের কাছোত গেছু কাও মোক কম্বল দেয় নাই, জারোতে মুই মরি যাওছো। তোমরা দিলেন, তোমার ভালো হইবে।’

কম্বল পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন দুঃস্থ নারীরা।

শীত কুয়াঁশা উপেক্ষা করে কেউ বাচ্চা কোলে, কেউবা লাঠিতে ভর দিয়ে শীতের কম্বল নিয়েছেন।

কম্বল বিতরণ কাজে অংশ নেন, খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুর বানু, বারিতুন নাহার, আছমা আকতার, স্থানীয় সমাজসেবক সহিদ আহমেদ, জান্নাতুল ফেরদৌসি,প্রথম আলো প্রতিনিধি মীর মাহমুদুল হাসান, বন্ধু সভার সহসভাপতি নিপুন রায় প্রমুখ।

 উল্লেখ্য এনভয় লিগ্যাসি ও শেলটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ ব্যাক্তিগত অর্থায়নে ৫০০টি কম্বল প্রথম আলো ট্রাস্টে প্রদান করেছেন। ওই কম্বল থেকে নীলফামারীর শীতার্ত মানুষের জন্য ২৫০টি কম্বল পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪ জানুয়ারি জেলা শহরের টাউনক্লাব মাঠে ১৫০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। আজ মঙ্গলবার বাকী ১০০টি কম্বল খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিতরণ করা হলো।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। হিসাব নম্বর: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪; ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন, ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমে আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন। ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে ৭,৬৯,৬৩০ টাকা অনুদান এসেছে। এই সহযোগিতার মধ্যে ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা) পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে।