‘গোমতীডা (গোমতী নদী) আমড়ারে আইজ এরুম করল। আমড়ার লাইগ্গা তোমরা কত কষ্ট করেছ বাপ। বুক হমান পানি ভাইঙ্গা আইছ। দোয়া করি, আল্লায় তোমড়ারে অনেক বড় করুক’—প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দেওয়া ত্রাণসামগ্রী হাতে পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন রায়না আক্তার। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বড়দশিয়া গ্রামের বন্যার্ত এই বাসিন্দা এভাবে দোয়া করেন পানি ভেঙে সেখানে ত্রাণ নিয়ে হাজির হওয়া বন্ধুসভার স্বেচ্ছাসেবীদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা ছাড়াও নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এক দিনে আরও ৯০০ পরিবারের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। এদিন সিটি ব্যাংকের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এই ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল কুমিল্লার দেবীদ্বার ও ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩০০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল স্যালাইন, দেশলাই, চিড়া, মুড়ি, তরল দুধ, মোমবাতি, বোতলজাত পানি ও বিস্কুট।
দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজার এলাকায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধের ভেতরে বসবাস করে ঋষি সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০ পরিবার। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার পর ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন নদীর বাঁধে আশ্রয় নেন। তবে বেশির ভাগ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বাজারের পাশের গঙ্গামন্ডল রাজ ইনস্টিটিউটে। খাবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকা ঋষি সম্প্রদায়ের কাছে গতকাল সকালে কুমিল্লা বন্ধুসভার সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
নোয়াখালীতে আরও ৪০০ বন্যাদুর্গত পরিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। গতকাল জেলার সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর; বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের দুর্গম তালুয়া চাঁদপুর গ্রাম; জেলা শহর মাইজদীর পৌর এলাকা ও সদর উপজেলার পূর্ব চর মটুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ জগতপুর এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
ত্রাণসামগ্রী হাতে পেয়ে সেনবাগের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের কল্যান্দী দুর্গামন্দিরে আশ্রয় নেওয়া নারী কানন বালা (৮০) বলেন, বাড়ি ও বসতঘরে বন্যার পানি ওঠায় ১০ দিন ধরে এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। এলাকার লোকজন খাবার দিয়েছেন, কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে বাইরের কেউ ত্রাণ দেয়নি। ত্রাণ পেয়ে স্বস্তি লাগছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে গেলে কয়েক দিন আর খাবারের চিন্তা করতে হবে না।
এদিকে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল লক্ষ্মীপুর জেলায়ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জেলার রায়পুর উপজেলার চরপাতা গ্রামের ২০০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
ত্রাণ পেয়ে কুলসুম বেগম বলেন, ‘১০ দিন ধরে পানিতে ডুবে আছে গ্রাম। কেউ খোঁজ নেয়নি। আগে কোনো ত্রাণ পাইনি।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী; প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর ও সংবাদদাতা, কুমিল্লা]