‘কম্বলটা গাওত দিয়া আইজ শান্তিতে ঘুমাইম’
টানা নয় দিন ধরে রংপুরের বদরগঞ্জে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কুয়াশা আর ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত। স্থানীয় চিকলি নদীর ধারের বাসিন্দারা নিদারুণ দূর্ভোগে দিনযাপন করছে। নদীর হিমেল বাতাসে ঠান্ডার তীব্রতা প্রতিদিন বাড়ছে। স্থানীয় লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে। চিকলি নদীপাড়ের গরীব দুস্থ অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো ট্রাষ্ট। আজ বুধবার বেলা ১১ টার দিকে দামোদরপুরের চিকলি ফুটবল খেলার মাঠে কম্বল বিতরণ করা হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি বদরগঞ্জের দামোদরপুর জেলেপাড়া, হাটখোলাপাড়া, বটতলী, চটকুপাড়া, মোস্তফাপুর মন্ডলপাড়া, বকশীপাড়া ও তুফানুপাড়া গ্রাম ঘুরে গরীব অসহায় দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয় কম্বলের স্লিপ। এছাড়া বদরগঞ্জ পৌরসভার রেলওয়ে বস্তি, শাহাপুর, নোয়াখালিপাড়া ও রাধানগরের পাঠানপাড়া গ্রাম ঘুরে একইভাবে দেওয়া হয় স্লিপ। আজ বুধবার খেলার মাঠে উপস্থিত হন ১০৭ জন স্লিপধারি দুস্থ অসহায় নারী-পুরুষ। তাঁদের হাতে কম্বল তুলে দেন, আমরুলবাড়ি আসমতপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম বরকত আলী সরকার ও স্থানীয় আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আহাদ আলী সরকার। এসময় উপস্থিত ছিলেন, প্রথম আলোর বদরগঞ্জ প্রতিনিধি, আলতাফ হোসেন দুলাল। কম্বল বিতরণে সহযোগিতা করেন, কলেজ শিক্ষার্থী মোস্তাফিজার রহমান, সুজন মাহমুদ, আনোয়ারুল ইসলাম ও স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফুল আলম।
লাঠিতে ভর দিয়ে কম্বল নিতে এসেছিলেন চিকলি নদীপাড়ের বাসিন্দা আছিরন নেছা (৮৭)। তিনি বলেন, 'টপ( তাড়াতাড়ি) করি মোক কম্বল দেও, গাওত দিয়া বাঁচো।'
কথা বলে জানা গেল, আছিরন নেছার ছয় সন্তানের চারজন মারা গেছেন। স্বামী আব্দুর রহমান মারা গেছেন ৪০ বছর আগে। দুই সন্তান অর্থাভাবে সংসার চালাতে পারেন না। আছিরন থাকেন চিকলি নদীর পাড়ে অবস্থিত টাটিবেড়ার ঘরে। নদীর ঠান্ডা বাতাস বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢোকে। এতদিন কম্বল অভাবে অনেক কষ্টে ছিলেন তিনি।
চটকুপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেছেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৯১ বছর। দুই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে এসেছিলেন। কম্বল হাতে পেয়ে বলেন, 'বেলাটা ওই যে মুন্দিছে আর দেখা যাওচে না। নয় দিন থাকি ঠান্ডাতে খুব কষ্ট হইছে। কম্বলটা গাওত দিয়া আইজ শান্তি মোতোন ঘুমাইম।'
পাঠানপাড়া গ্রাম থেকে স্লিপ হাতে এসেছিলেন, মোজাম্মেল হক (৭৫)। তিনি বলেন, ‘তোমরা মোর মোতন গরীব মানুষ খুঁজিয়া বাইর করি যে কম্বলটা দেনেন, সেই জন্যে তোমাক ধন্যবাদ দেওচি। কম্বলটা ঠান্ডাত খুব উপকার করবে।'
স্লিপ না পেয়েও কম্বল পাওয়ার আশায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে এসেছিলেন, ডাঙ্গিরপাড়া গ্রামের মিনতি রায় (৬২)। পরে তাঁর জন্যেও একটি কম্বলের ব্যবস্থা করা হয়। কম্বল পাওয়ার পরে তিনি তা গায়ে জড়িয়ে বলেন, 'ভগবান তোমার ভালো করুক।'
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। হিসাব নম্বর: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪; ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন, ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমে আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে ৮,০৯,০৩৩ টাকা অনুদান এসেছে।