‘আমি বড় গরিব মানুষ। একটা টিনের ঘরে থাকি। চারদিক দিয়া বাতাস ঢোকে। শীতে ঘরের মধ্যেও খুব কষ্ট হয়। এই কম্বল পাইয়া বড় উপকার হইল। এহন কম্বল মুড়ি দিয়া শান্তিতে ঘুমাইতে পারব।’
কম্বল হাতে পেয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর কল্যাণপুর গ্রামের আলেয়া বেগম (৬৭)। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার চর গোপালপুর গ্রামে শীতার্ত ২০০ মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতার্ত মানুষ খুঁজে খুঁজে টোকেন দিয়ে আসেন প্রথম আলো বন্ধুসভা ফরিদপুরের সদস্যরা।
কম্বল নিতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছেন চর কল্যাণপুর গ্রামের মালেকা বেগম (৬৯)। কম্বল হাতে তুলে দিতেই তাঁর দু্ই চোখ আনন্দে চকচক করে ওঠে। তিনি বলেন, ‘এইবার শুরু থেইক্কা হাড় কাঁপানো শীত পড়তেছে। শীতে হাড় পর্যন্ত ঠকঠক কইরা কাঁপে। এখনো কেউ কম্বল দিতে আসে নাই। এই কম্বল পাইয়া আমি খুশি। আর শীতে কষ্ট পাইতে হবে না।’
টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে রাসেল সিকদারের (১০)। চর গোপালপুর গ্রামের এই শিশু জানাল, পদ্মা নদীর পাড়ে একটি দোকানে সে কাজ করে। তার বাবা করেন কৃষিকাজ। কম্বল পাওয়ার পর শিশুটি বলে, ‘ঘরে ভালো কোনো কম্বল ছিল না, যা দিয়া কাল (শীত) ঠেকান যায়। এই কম্বল গায়ে দিয়া এইবার শান্তিতে ঘুমাইতে পারব।’
প্রথম আলো বন্ধুসভা ফরিদপুরের সভাপতি মানিক কুণ্ডু বলেন, ‘ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে আমরা ফরিদপুর বন্ধুসভার সদস্যরা বের হয়ে পড়ি। সাড়ে আটটার দিকে চরভদ্রাসনের কাজীবাড়ি ঘাট থেকে ট্রলার ছেড়ে যায় চর ঝাউকান্দার চর গোপালপুর ঘাটের উদ্দেশে। সে ট্রলারে চড়ে পদ্মা নদী পার হয়ে বন্ধুসভার ১০ জন কর্মী শীতার্ত মানুষদের হাতে কম্বল তুলে দেন।’
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় শিক্ষক আবদুস সবুর। তিনি বলেন, ‘শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় চর এলাকার মানুষ, কিন্তু অসহায় এসব মানুষের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। এভাবে চরে এসে অসহায়–দুস্থ মানুষ খুঁজে খুঁজে বের করে কম্বল বিতরণ অন্যদের উৎসাহ জোগাবে।’
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে সহায়তার অর্থ পাঠাতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৫৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন। এ পর্যন্ত বিকাশের মাধ্যমে অনুদান এসেছে ৬৪ হাজার ১৯৪ টাকা। আর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এসেছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮০ টাকা।