বান্দরবানে কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক আলোর পাঠশালায় কম্বল বিতরণ
কচ্ছপতলীর আকাশ থেকে কুয়াশার চাদর সরে যাচ্ছে। আকাশে সূর্যের ছটা। রোদ উঠতে শুরু করেছে। সেই রোদকে সঙ্গে নিয়ে কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক আলোর পাঠশালায় গ্রামবাসী সমবেত হয়েছেন। শীতের কম্বল নিতে কেউ এসেছেন শিশু কোলে, কেউ লাঠিতে ভর করে, কেউবা গলাভর্তি পুঁতির মালা পরে। লাঠিতে ভর দিয়ে কম্বল নিতে এসেছেন শৈনুখয় মারমা। তিনি বলেন, ‘কম্বলটি এই শীতের রোদের মতো আরাম দেবে।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ট্রাস্ট পরিচালিত কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক আলোর পাঠশালা মাঠে শীতের কম্বল বিতরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের দরিদ্র ছাত্রছাত্রী ও এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ১০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি চোহাইমং মারমা। এসময় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চাইনিং মারমা, পরিচালনা কমিটির সদস্য নু চ মং মারমা, আলেক্ষ্যং হেডম্যানপাড়ার কার্বারী (পাড়াপ্রধান) তলানম বম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাপ্রাত ত্রিপুরাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এক বছরের শিশু কোলে নিয়ে কম্বল নিতে আসা এয়ইনু মারমা বলেন, ‘এই শীতে তুলতুলে কম্বলটি আমার বাচ্চার জন্য খুবই কাজের হবে। সবকিছুর দাম বেশি। কম্বল কেনার জন্য টাকা কুলায় না।’
গলাভর্তি পুঁতির মালা পরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দুর থেকে পায়ে হেঁটে কম্বল নিতে এসেছেন দৈনতি ত্রিপুরা ও সামাউ ত্রিপুরা। তাঁরা বলেন, ‘দিনে শীত কম হলেও রাতে সমতলের চেয়ে পাহাড়ে শীত বেশি। শীত কাটাতে এই কম্বল খুব কাজে লাগবে।’
বৃদ্ধ নারী হ্লাঞো মারমা নিজের ভাষায় বলেন, ‘বয়সের কারণে কাজ করতে পারি না। কিন্তু খাওয়া, শীতের কাপড়তো লাগে। এই কম্বল কনকনে শীতে আমাদের সম্বল হয়েছে। তোমাদের জন্য আশীর্বাদ থাকলো।’
বান্দরবান জেলা শহরের থেকে ৩০ কিলোমিটার ও রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কচ্ছপতলী মহল্লা অবস্থিত। এলাকাটিতে মারমা, বম, ত্রিপুরা, খেয়াং ও তঞ্চঙ্গ্যা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা দরিদ্র ও দুর্গম পাহাড়ে থাকেন।
রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান চোহাইমং মারমা বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা, শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কাজে কচ্ছপতলী এলাকাবাসীর পাশে থাকার জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে এভাবে পাশে থাকলে এলাকাটির আর্থ–সামাজিক উন্নয়ন সহজ হবে।
উল্লেখ্য, প্রথম আলো ট্রাস্টের শীতবস্ত্র বিতরণের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে ৫০০ টি কম্বল দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই কম্বল অসহায় শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৪১৭ টাকা প্রথম আলো ট্রাস্টে অনুদান এসেছে। এর মধ্যে প্রখ্যাত টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জোবেরা রহমান লিনু ২০ হাজার ও ওল্ড ডিওএইচএস ( বনানী) বাসিন্দা মাহমুদা খাতুন ২০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।