যমুনার চরে অসহায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ

কম্বল গ্রহণ করছে এক বৃদ্ধা নারী। আজ সোমবার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনার চরে।
ছবি: প্রথম আলো।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনা চরের চর মালশা পাড়া গ্রামের সরকারি জায়গায় একটা ঝুপড়ি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বাস করেন রহিমা বেগম (৭২)। দুই বছর আগে তাঁর স্বামীর মারা যান। এর পর থেকে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে তাঁর ডান পায়ের তালুর অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। তাঁর একমাত্র ছেলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় করেন, তাই দিয়েই কোনোমতে চলে তাদের সংসার। এমন অভাবের মধ্যে প্রয়োজনীয় গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই।

নতুন কম্বল হাতে পেয়ে রোহিমা বেগম বলছিলেন, ‘বাবারে, এই জারে হারাডো রাইত এল্লাও গুম অয়না। একখান ছেড়া খ্যাতা গায়ে দিয়্যা জারের ঠেলায় হারাডো গাও ব্যায়ুস (অবশ) অয়া আইসে। আমার ডাইন পাউবো নিচে তো কোন হোদ (বোধ) নাই। কয়দিন ওইলো গরের মইদে জারের হাতে বাতাস ডোকে। খ্যাতায় জার মানে না। ট্যাহাপয়সার অবাবে আমার চিকিত্সাই করাইব্যার পারিন্যা। গরম কাপড় কিনমু কীবাবে। আপনেগোরে কম্বলডো পাইছি এহুন জার থাইক্যা ম্যালা আরাম পামু।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে যমুনা নদী বিধৌত সিরাজগঞ্জে ১৭৫ জন অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার চর মালশা পাড়া গ্রামের কলাপাড়া মাঠে ।
ছবি: প্রথম আলো।

যমুনা নদী বিধৌত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চর মালশা পাড়া গ্রামের কলাপাড়া মাঠে আজ সোমবার দুপুরে এমন ১০৫ জন শীতার্ত মানুষকে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকেলে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের রেলওয়ে কলোনি এলাকায় ভাসমান অবস্থায় বসবাসরত আরও ৭০ জন অসহায়, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরা এসব কম্বল বিতরণ করেন।

কলাপাড়া মাঠে শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেন জ্ঞানদায়িনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান মুরাদ, কলতলা এলাকার যুব সংগঠক মানিক মিয়া, সিরাজগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি প্রদীপ সহা, সহসভাপতি গোলাম রেজা ই-রাব্বী, সাধারণ সম্পাদক আল মনসুর।

কম্বল গিয়ে বাড়ি ফিরছেন এক বৃদ্ধা নারী।
ছবি: প্রথম আলো।

যমুনা চরের কলাপাড়া এলাকার ভাসমান বাসিন্দা বাতাসি বেগম (৮৮)। তাঁর চার মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। সবারই যেন টানাটানির সংসার। স্বামী মারা গেছেন গত সাত বছর আগে। ছোট মেয়ের জামাইয়ের পরিবারে পাঁচজনের সংসারে এখন থাকেন তিনি। মেয়ের জামাই রিকশাচালক। মাঘের এই কনকনে শীতে কম্বল পেয়ে বাতাসি বলেন, ‘জারের ঠ্যালায় রাইতে উইট্যা বইস্যা থাকি বাবা। আঙ্গোরে তেমন জারের কাপড় নাই। এই কম্বলডো পায়া এহুন ম্যালা আরাম ওইবো। রাইতে গুমাইব্যার পারমু।’

কম্বল পেয়ে চর মালশাপাড়া গ্রামের ভাসমান বাসিন্দা সাহেদা বেগমের (৭৮) মুখেও ফুটছে হাসির ঝিলিক।

সিরাজগঞ্জ সদরের যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকার চর মালশাপাড়া, কলা পাড়া, চর মিরপুর গ্রাম ও পৌর শহরের রেলওয়ে কলোনী এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভাসমান অবস্থায় বসবাসরত অসহায় দরিদ্র শীতার্ত পরিবারগুলোর তালিকা করেন। এরপর আজ তাদের মধ্যে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা)। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অনুদানের টাকায় কেনা কম্বল অসহায় শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাব নম্বর: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা

বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন, ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমে আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন। ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯১১ টাকা অনুদান এসেছে।