চার জেলায় ত্রাণ পেল আরও ১০৩০ বন্যার্ত পরিবার

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পাওয়া ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন একজন নারী। গতকাল দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়ায়।ছবি: জুয়েল শীল

এর আগে একজন চিড়া–মুড়ি দিয়েছিল। এই প্রথম পেলেন রান্না করার মতো খাবার। এখন পেট পুরে দুবেলা খেতে পারবেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বিতরণ করা ত্রাণ হাতে এভাবেই বললেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা বীণা শব্দকর। গতকাল বুধবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কমলগঞ্জের পতনউষার ইউনিয়নের চারটি এলাকায় বন্যার্ত ২০০ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়।

বীণা শব্দকরদের এলাকায় প্রায় সবার বাড়িতে বন্যার পানি উঠেছিল। চার-পাঁচ দিন পানিবন্দী কেটেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে চিড়া-মুড়ি পেয়েছেন অনেকেই। গতকালই প্রথম রান্না করার মতো খাবার পেয়েছেন বাসিন্দারা।

গতকাল মৌলভীবাজারসহ প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর ১ হাজার ৩০টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এদিনের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে সিটি ব্যাংকের সৌজন্যে। প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

গতকাল কমলগঞ্জের পতনউষার ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর, পতনউষার, রথের টিলা ও ধূপাটিলা এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ হাতে ফুলজান বেগম নামে এক নারী বলেন, পানিতে রান্নার ঘর ভেঙে গেছে। স্বামীও কাজে যেতে পারছেন না। ত্রাণ পেয়ে তিনি খুশি।

গতকাল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর, মান্দারী ও দিঘলী গ্রামে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভা লক্ষ্মীপুরের সদস্যরা। এসব এলাকায় ২৫০টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তাঁরা।

ত্রাণসামগ্রী হাতে হোসনেয়ারা বেগম নামের এক নারী জানান, এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানিতে ডুবে আছে তাঁদের গ্রাম। পানি মাড়িয়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। কোনো জায়গায় গলাসমান, আবার কোথাও ডুবে যাওয়ার অবস্থা। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়েই বড় দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ত্রাণসামগ্রী পেয়ে সেই দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও দূর হলো।

মো. ইসমাইল নামের একজন রিকশাচালক বললেন, ‘বন্যার কারণে পাঁচ দিন ধরে রিকশা চালাতে পারছি না। আয়রোজগার বন্ধ। হাতে কোনো টাকাপয়সাও নেই। ত্রাণ দিয়ে বড়ই উপকার করলেন।’

ত্রাণ বিতরণের কাজে যুক্ত ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভা লক্ষ্মীপুরের সভাপতি এস কে রিয়াদ। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। অনেকের বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। বেশির ভাগ মানুষ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাড়িতে পরিবারসহ পানিবন্দী রেনু বেগম (৪৫)। এই সময়ের মধ্যে ত্রাণসহায়তা বলতে তিন দিন আগে সামান্য শুকনা খাবার পেয়েছিলেন বলে জানালেন এই গৃহিণী। বললেন, ঘরে যে চাল–ডাল ছিল, তা–ও শেষ। খাবারের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

রেনু বেগমের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামে। গতকাল কলাবাড়িয়া ও লুদুয়া গ্রামের ২৫০টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

গতকাল ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, ফুলগাজী ও দাগনভূঞার বন্যার্ত ৩৩০ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে চট্টগ্রাম ও ফেনী বন্ধুসভার সদস্যরা বন্যার্ত মানুষের কাছে এসব ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন।

ত্রাণ হাতে পেয়ে ফুলগাজীর জিএম হাট এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৭০) বলেন, ‘সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব আমি। জানি না কবে সব ঠিক হবে। দ্বিতীয়বারের মতো ত্রাণ পেলাম। আগামী কয়েক দিন অন্তত কিছু খেতে পারব।’

বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল। হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক পিএলসি, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।