অসম্ভবকে সহজেই সম্ভব করতে পারতেন আমাদের তুষার ভাই

সারা দেশে প্রথম আলো ট্রাস্টের যে ত্রাণ বা সহায়তা কার্যক্রম চলে তার প্রাণ বন্ধুসভা। বন্ধুসভার বন্ধুরা দেশের নানা দুর্যোগে প্রথম আলো ট্রাস্টের হয়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জুবায়ের কবির তুষার বন্ধুসভার তেমনই এক বন্ধু, যিনি দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে তাঁর সর্বোচ্চটুকু নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ হঠাৎ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জুবায়ের কবির। প্রথম আলো ট্রাস্ট বন্ধু জুবায়ের কবির তুষারের অকালপ্রয়াণে শোকাহত। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জুবায়ের কবির তুষারের কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন বন্ধুসভার পুরোনো বন্ধু তানভীন নাহার জাকিয়া।

জুবায়ের কবির তুষার

জুবায়ের কবির তুষার নামটি মনে হলেই চোখের সামনে সদা হাস্যোজ্জ্বল এক মুখ ভেসে ওঠে। একজন ‘খাঁটি দেশপ্রেমিক’ তুষার ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ২০১২ সালে। নন্দন পার্কে প্রথম আলো জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলছে। সেই বিশাল কর্মযজ্ঞে তুষার ভাইকে দেখছিলাম কী সহজেই সবকিছু দক্ষ হাতে পরিচালনা করছেন। বন্ধুসভার কাজ তদারকি করছেন, আমাদের মতো নতুন বন্ধুদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রথম দিনেই তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত সাংগঠনিক দক্ষতা দেখে বুঝেছিলাম এ এক অন্য রকম মানবিক মানুষ!

একটি ঘটনার কথা না লিখে পারছি না। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ইতিহাসের ভয়াবহ ঘটনা রানা প্লাজাধস। টিভিতে সংবাদ প্রচারের পরপরই তুষার ভাই নিজ উদ্যোগে বন্ধুসভার তৎকালীন বেশ কয়েকজনকে ফোন দিয়ে বন্ধুসভার অফিসে আসতে বলেন। তুষার ভাই প্রস্তাব করলেন আমাদের সেখানে যাওয়া উচিত এবং বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা উচিত। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, বন্ধুসভার তৎকালীন সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন, সাহিত্যিক আনিসুল হকের পরামর্শে প্রথম আলো ট্রাস্ট থেকে নগদ অর্থ নিয়ে বন্ধুসভার একটি টিম রানা প্লাজার দিকে যাত্রা করে।

সেদিন তুষার ভাইয়ের যে ভূমিকা দেখেছি, তা ভোলার নয়। এনাম মেডিকেল কলেজে আহতদের ভর্তি করানো, ফার্মেসি ঘুরে ঘুরে জরুরি ওষুধ খুঁজে আনা, অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা সবকিছুই আজও চোখের সামনে জ্বলজ্বলে… 

গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জীবন বাঁচাতে হন্যে হয়ে রক্ত খুঁজছেন, দিনরাত রানা প্লাজায় থেকে নিজে অসুস্থ হয়েছেন, কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি। 

এনাম মেডিকেল কলেজের বন্ধুসভার বন্ধুরা সেই সময় দল করে আহত রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছিলেন। পরে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ভবনধসে নিহত বেশ কয়েকটি পরিবারকে সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। 

সবকিছুতে খুব পজিটিভ থাকা, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী এক মানুষ জুবায়ের কবির তুষার। প্রতিটি ভালো কাজে নিষ্ঠার সঙ্গে প্রবল আগ্রহ নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অন্যের সংকটে পাশে থাকতেন, অসম্ভবকে সহজেই সম্ভব করতে পারতেন আমাদের তুষার ভাই। আমরা সবাই মিলে তাঁর অকাল চলে যাওয়াটা আটকাতে পারলাম না। এই আফসোস থেকে যাবে…

লেখক: তানভীন নাহার জাকিয়া, বন্ধুসভার পুরনো বন্ধু।