সমুদ্র পাড়ের সুলতানার মেডিকেলে পড়ার সুযোগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অদম্য মেধাবী শাহিন সুলতানা।

‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শিখে একদিন ভালো চিকিৎসক হব। তারপর সমুদ্র উপকূলের গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়াব। এই পথে হাঁটা ছিল অনেক কঠিন। তবুও সব অভাব, দারিদ্র্যের মধ্যে চিকিৎসক হওয়ার প্রথম ধাপে সফল হয়েছি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। বাকিটা আল্লাহর হাতে। চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা যখন আছে, উপায়ও একটা হয়ে যাবে।’ কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতরিয়া পাড়ার শাহিন সুলতানা।

চলতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় ৭৯ দশমিক ৫ স্কোর (মেধাতালিকায় ৯২৭) নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এমবিবিএস ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অদম্য মেধাবী শাহিন সুলতানা। সুলতানা ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অদম্য মেধাবী শাহিন সুলতানা।

শাহিন সুলতানার জন্ম মহেশখালীর সমুদ্র উপকূলীয় ধলঘাটায়। তাঁর এলাকার অধিকাংশ মানুষ জেলে ও লবণ চাষি। জলোচ্ছ্বাসে শাহিনদের ঘরবাড়ি বিলীন হলে তাঁদের পুরো পরিবার কক্সবাজার শহরের সাহিত্যিকা পল্লিতে চলে আসে। সেখানে একখণ্ড জমিতে ছোট্ট ঘর তৈরি করে শুরু হয় তাঁদের জীবনযাপন। শহরের বড়বাজার এলাকার বাবা কামাল উদ্দিনের ছোট্ট একটি পানের দোকান আছে। সারা দিন খিলি পান বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালান তিনি। এর মধ্যে তিন মেয়ে ও দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ টানতে তিনি বেসামাল হয়ে পড়েন। পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ শাহিন সুলতানা ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছিল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অদম্য মেধাবী শাহিন সুলতানা। অনেকেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় শাহিন সুলতানা ১২১৬ নম্বর পান যা ছিল কক্সবাজার জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এসএসসিতে অসাধারণ ফলাফলের পর উচ্চমাধ্যমিকের দুই বছর শাহিনের লেখাপড়ার আর্থিক খরচের দায়িত্ব নেয় প্রথম আলো ট্রাস্ট। সাফল্য ধরে রাখায় তাঁকে স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করবে এই তহবিল।

শাহিন সুলতানার মা নুরুজ্জাহান প্রথম আলোকে বলেন,‘ এসএসসি পাস করার পর থেকেই এইচএসসি পর্যন্ত মেয়ের পাশে দাঁড়ায় প্রথম আলো ট্রাস্ট। এখন মেডিকেলে পড়ার খরচও দেবে তারা। এতে করে আমার মেয়ে ভালোমতো পড়তে পারবে। ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।’