দুর্গম পাহাড়ে অংথোয়াইয়ের আলোকবর্তিকা

ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী অংথোয়াইচিং মারমা।

খাগড়াছড়ি থেকে বেশ গহিনের গ্রাম থৈলা পাড়া। প্রায় ৮০টি পরিবারের বসতির দুর্গম এই পাড়ার অধিকাংশ ঘরেই পৌঁছায়নি শিক্ষার আলো। সেই পাড়াতেই মা–বাবা, তিন ভাই, দুই বোন নিয়ে অংথোয়াইচিং মারমার সংসার। বাবা ছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু। বাবাকে সেই অর্থে কখনো অং বাড়িতেই দেখেননি। ছেলেমেয়েদের দেখভাল করাসহ সংসারের সব দায়িত্ব নিয়ে অংয়ের মা একাই লড়ে গেছেন। যেখানে এক বেলা খেলে আরেক বেলা কী হবে তাই নিয়ে ভাবতে হয়েছে, সেখানে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যেন এক যুদ্ধ। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি দারুণ ঝোঁক অংথোয়াইয়ের । ছেলের এই আগ্রহ দেখে মা শত কষ্ট করলেও তাঁর পড়াশোনা বন্ধ করেননি। ছোট্ট অং কেবল জানতেন তাঁকে এগিয়ে যেতে হবে। শত কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যান অং। চলতে থাকে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পান অং। তাঁর বিদ্যালয় থৈলাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষার্থী অংথোয়াইচিং মারমা যে জিপিএ–৫ পেলেন। মায়ের মুখে হাসি। কিন্তু এখানেই যেন থামতে নারাজ অংথোয়াই। তিনি থামেন না। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পান। কিন্তু প্রকৃতি যেন ঠিক এই খুশিও অংয়ের ঝুলিতে দিতে নারাজ ছিল। একদিন হঠাৎ পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে কর্মক্ষমতা হারান অংয়ের মা। পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেল। জীবনকে যখন অন্ধকারে ডুবে যেতে দেখছেন অং, ঠিক তখনই পত্রিকার একখণ্ড খবরে চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখতে পেলেন তিনি।

ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী অংথোয়াই মারমা।

ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ঢাকার নট রডেম কলেজে ভর্তি হন অংথোয়াই। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি অং। উচ্চমাধ্যমিকেও জিপিএ–৫ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। এবার ভর্তির সুযোগ পান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট)। পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। অং বিশ্বাস করেন, শিক্ষার আলো ছাড়া জীবনে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চান অং আর তাঁর স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ হিসেবে তিনি তাঁর গ্রামকে নিরক্ষরমুক্ত করে গড়ে তুলতে চান। স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়ে নিজের গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন থৈলাপাড়া পঞঞারঙ পাঠাগার। গ্রামের তরুণদের নিয়ে সেখানে বিনা মূল্যে গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয় অংয়ের দল। দুর্গম পাহাড়ে যেই আলোকবর্তিকা নিয়ে চলছেন ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী অংথোয়াইচিং মারমা, সেই আলোয় উদ্ভাসিত হোক তাঁর স্বপ্ন।

লেখক: সমন্বয়ক, প্রথম আলো ট্রাষ্ট