গ্রামের হাটে কাজ করা রুবেল এখন প্রভাষক

মো. রুবেল ইসলাম ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের একজন। তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মেট্রোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক পদে চাকরি করছেন।

নীলফামারী জেলার ডোমার থানায় রুবেলের বাড়ি। নিজেদের জমি জমা বলতে কিছুই নেই। তিন ভাই বোনের মধ্যে রুবেল সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে গ্রামের হাটে ইজারাদের পণ্য ওজন করা ও হিসাব নিকেশের কাজ করতেন। পাশাপাশি পড়াশোনা করতেন। এভাবে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বৃত্তির পান ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে।

অদম্য মেধাবী মো. রুবেল ইসলাম সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। তাঁর এই সফলতার গল্প ওঠে আসে ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

কেমন লাগছে শিক্ষক জীবন জানতে চাইলে রুবেল ইসলাম জানান, ‘খুবই এনজয় করছি। ভালো লাগছে।’ গ্রামের হাটে কাজ করা রুবেল এখন প্রভাষক। এর পেছনের গপ্ল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অর্থনৈতিক সমস্যা হয়নি, কারণ এ সময় খরচ কম হয়। সপ্তম থেকেই মূলত সমস্যাটা তৈরি হয়। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন, কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। কোনো জমাজমি নেই। বাবা আমাদের পড়াশোনায় সাপোর্ট করতে পারতেন না। তিন বেলা খাবার জোটানোই বাবার জন্য কঠিন ছিল। সেখানে পড়াশোনা করাটা এক ধরনের বিলাসিতা ছিল। পড়াশোনার প্রতি আমার প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল আমার। তাই পড়াশোনাটা চালাতে হলে আমাকেই কিছু করতে হবে-এটা আমি বুঝে যাই। তাই বাজারে ইজারাদারের হিসাব নিকাশ করার কাজ করে দিতাম। আমাকে যা দিত, তা দিয়ে আমি পড়াশোনার খরচ চালাতাম।’

স্মৃতিচারণ করতে করতে বলেন, ‘হাটে কাজ করতাম, পড়াশোনা করতাম। এটা করেও ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমার রোল এক ছিল। ভালো ছাত্র হওয়ায় এবং আমার পরিবারের অবস্থা বিবেচনায় অনেক শিক্ষক আমাকে বিনা বেতনে পড়াতেন। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এভাবে সবার সহায়তায় টেস্ট পরীক্ষা দিলাম, এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। ফলাফলও ভালো করলাম। কিন্তু বিধি বাম। কীভাবে সামনের পড়াশোনা চালব সেটা নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম। এ সময় প্রথম আলোর নীলফামারী প্রতিনিধি আমার বাড়িতে আসলেন, আমাকে নিয়ে রিপোর্ট করলেন। সেই রিপোর্টের কারণে আমার স্বপ্ন পূরণের পথ খোঁজে পাই।’

রুবেলের পারিবারিক অবস্থা ও অদম্য মেধাকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। দুই বছর দেওয়া হয় এই শিক্ষাবৃত্তি। এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে এইচএসসিও আবার জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য ধরে রাখেন। ধারাবাহিক সফলতায় তাঁকে পুনরায় স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ের জন্য শিক্ষাবৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়। বৃত্তি সহায়তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মেট্রোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক পদে চাকরি করছেন।

শিক্ষক হিসেবে অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে রুবেল জানান, ‘খুবই উপভোগ করছি শিক্ষকতা। আমার শিক্ষার্থীদের আমার জীবন থেকে নেওয়া বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করি। কোনো প্রতিকূলতাই যে বাধা তৈরি করতে পারে না, সেটা বলি। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি।’