ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া মোংলার মেয়ে লাবনী আক্তার। তিনি গত বছর গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ নার্সিং কলেজ থেকে বিএসসি ইন নার্সিং শেষ করেছেন। বর্তমানে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত।
লাবনীর বাবা লুৎফর রহমান শিপে মালামাল ওঠা-নামার কাজ দেখাশোনা করতেন। ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ২০০১ সালে হঠাৎ তিনি মারা যান। তখন লাবনীর বয়স মাত্র ১১ মাস, বড় বোন শিল্পীর বয়স দুই বছর, বড় ভাই ৮ কিংবা ১০ বছর। এমন অবস্থায় মা বেবী বেগম তিন সন্তানকে নিয়ে অথই সাগরে পরলেন। সন্তানের খাওয়া-পড়ার খরচ পাবেন কোথায়? ছোট্ট যে ঘরটাতে ভাড়া থাকেন, তার ভাড়া দেবেন কীভাবে? নিজেদের কোনো জমি-জিরাত নেই। কোনো উপায় না পেয়ে বেবী বেগম কখনো দিনমজুর, কখনো হোটেলে ধোয়ামোছার কাজ শুরু করলেন। এই অবস্থাতেও লাবনী পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হয়নি। কঠোর মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন। এভাবে এসএসসি পরীক্ষায় মোংলার টিএ ফারুক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান তিনি। ভালো ফল ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় লাবনীর পাশে দাঁড়ায় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। তাঁকে দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তি। এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন লাবনী।
লাবনী জানালেন, ‘বাবা মারা গেলে মা বিপদের মধ্য পড়ে যান। আমাদের খাওয়া পড়া জোটাতে হিমশিম খেতে হয়। মা নিরক্ষর ছিলেন। তখন ছোট ছোট বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। যেমন ভাটায় শ্রমিকদের রান্না করতেন। এদিকে আমি ভালো ছাত্রী ছিলাম বলে শিক্ষকেরা সাপোর্ট করতেন। এভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিই। ওই সময় আমার বড় ভাই মারা যান। ছেলে হারিয়ে মা আরও ভেঙে পড়নে। যা হোক, আমি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার পাশে দাঁড়ায়। তাদের সহায়তায় পড়াশোনা করতে থাকি। কিন্তু ওই সময়টাতে পরিবারের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে, আমাকে টিউশনির দিকে যেতে হয়, পরিবারকে কিছুটা সাপোর্ট করার জন্য। পরে অনেকের সঙ্গে কথা বলে নার্সিংয়ে পরীক্ষা দিয়ে সরকারি বিএসসি নার্সিংয়ে সুযোগ হয়। এভাবে নার্সিংয়ে পড়া শুরু করি।’
এত কষ্টের মধ্যেও লাবনী শুধু পড়াশোনা নিয়েই থাকেননি। সামাজিক নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথম আলো বন্ধসভায় যোগ দেন। নার্সিং কলেজে পড়ার সময়ও এক্সট্রা কারিকুলার কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। অ্যাঙ্করিং, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবে যুক্ত ছিলেন। এই কাজগুলো তাঁর কনফিডেন্স লেবেল বাড়াতে সাহায্য করেছে বলে জানান লাবনী।