শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার প্রত্যন্ত চর কুণ্ডেরচরের অদম্য মেধাবী মো. হযরত আলী। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ তাঁর। কিন্তু বাদ সাধে পরিবারের অসচ্ছলতা। এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙনে সব বিলীন হয়ে গেলে অন্যের জমিতে ঠাঁই হয় তাদের। পরে একটা সময় ঢাকায় চলে আসে পরিবার। পারিবারিক সমস্যার কারণে প্রাথমিকের পর আবার গ্রামে চলে যেতে হয় তাদের। সাত ভাই এক বোনের মধ্যে হযরত ষষ্ঠ। বড় তিন ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। বোনের বিয়ে হয়েছে। বাকিরা কিছু পড়াশোনা করে বাদ দিয়েছে। বাবা বর্গাচাষি। মা গৃহিণী।
কিন্তু হযরত দমে যাননি। টেবিল ছাড়া হারিকেনের আলোয় পড়েছেন। খড়ের গাদায় তক্তা পেতে, কাঁথা বিছিয়ে ঘুমিয়েছেন। এমন টানাপোড়েনের মধ্যেও চরের স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পান। তাঁর স্কুল থেকে ২২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একমাত্র তিনিই জিপিএ-৫ পান এবং উপজেলায় দ্বিতীয় হন।
কিন্তু ভালো ফল করেও পরিবারে আনন্দ নেই। ভর্তি হতে পারবেন কিনা-এমন দুশ্চিন্তায় ছিলেন হযরত। তখন প্রথম আলোর প্রতিনিধি তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন করেন প্রথম আলোয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে দেওয়া হয় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি।
বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করে ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন হযরত। পুনরায় শিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখা হয় তাঁর। ভালো করে পড়াশোনা করে ২০১৩-১৪ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিবিএ (হিসাববিজ্ঞান) বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। এদিকে ৪৩ তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে (হিসাববিজ্ঞান) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। এখনও গেজেট হয়নি। তবে হযরতের ইচ্ছা বিসিএস প্রশাসনে যাওয়ার। এই স্বপ্নপূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বললেন তিনি।