খুলনার কয়রা উপজেলায় গোপাল বাছাড়ের বাড়ি। দুই ভাই, মা-বাবাসহ ৪ জনের পরিবার। ভাইয়ের মধ্যে গোপাল বড়, ছোট ভাইও পড়াশোনা করে। বাবা কৃষি কাজ করে সংসার চালান। মা গৃহিণী। একমাত্র উপার্জনকারী বাবার আয় ছিল খুবই সীমিত, যা দিয়ে কখনোই সবার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হতো না। তারপরও গোপাল থেকে যাননি। অদম্য ইচ্ছা ও মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথে। সে স্বপ্ন পূরণ করেছেন, এমবিবিএস পাস করেছেন।
ছোটবেলা কেমন ছিল জানতে চাইলে গোপাল বাছাড় বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর নবম শ্রেণিতে উঠতে গিয়ে অনেক সমস্যা হয়। আমার ইচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ব। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে খরচ বেশি, কীভাবে মেটাব! তাই খরচ কমানোর জন্য মানবিক বিভাগ নিতে চাইলাম। ভালো ফল করায় শিক্ষকগণ বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার পরামর্শ দিলেন। পরে শিক্ষকদের সহযোগিতায় নিজে সাহস নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলাম। অনেক শিক্ষক আমাকে বছরের পর বছর ফ্রি পড়িয়েছেন। সবার সহযোগিতায় এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাই।’
পরে তাঁর ভালো ফল ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তি নিয়ে এইচএসসি ও এমবিবিএস পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এইচএসসি পাসের পর ২০১২-১৩ সেশনে কোথাও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে পরের বছর আবার পরীক্ষা দেন। সে বছর মেডিকেল ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকেন। পরে খুলনার বেসরকারি মেডিকেল গাজী মেডিকেল কলেজে দরিদ্র মেধা কোটায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এখান থেকে এমবিবিএস পাস করে গাজী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। দুই বছর চাকরি করার পর স্নাতকোত্তর পর্ব-১ এ ভর্তির প্রস্তুতির জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। এখন এফসিপিএস পর্ব-১ এ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন।
গোপাল বাছাড় বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তির বিষয়টা বেশ কঠিন। সব সময় বাবা-মার কথা চিন্তা করেছি। মনে একটাই চিন্তা ছিল— হাল ছেড়ে দিলে হবে না। সবদিক চিন্তা করে এগিয়েছি, বাধাগুলো অতিক্রম করেছি। এখন স্নাতকোত্তর ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি। চিকিৎসায় উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে অনেকর অবদান আছে, তাঁদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’