সুবর্ণা রানী জন্মের পর থেকে পৃথিবীর রূপ দেখেনি। দুই বছর বয়সে তাঁর বাবা সুভাষ চন্দ্র দাস মারা যান। দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েন মা কণিকা রানী বিশ্বাস। সংসারের হাল ধরতে শুরু করেন কাঁথা সেলাইয়ের কাজ। পরে কাঁথা সেলাইয়ের পাশাপাশি বাসাবাড়িতেও কাজ শুরু করেন তিনি। ছোট্ট সুবর্ণা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন মা কণিকা রানী। প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন তিনি। এদিকে মেয়ের ছিল গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ। অভাব– অনটনকে তুচ্ছ করে মেয়েকে শিল্পকলা একাডেমিতে গানের ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। দিনের পর দিন সুবর্ণা ঠিকমতো খেতে পরেনি তাই বলে পড়াশোনা আর গান ছাড়েনি কখনও। এই অদম্য মনোভাবের কারণে গান আর পড়াশোনা দুই ক্ষেত্রেই আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টিহীন সুবর্ণা। সুর আর জ্ঞানের আলোর পৃথিবীর রূপ দেখছে সে।
২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জেলা শহরের ইয়াছিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে যান। ওই বছর এসএসসি পরীক্ষায় স্কুল থেকে একমাত্র সুবর্ণাই জিপিএ-৫ পান।
তাঁর এই সাফল্যের কথা ছাপা হয় প্রথম আলোয়। পরে তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও অদম্য মেধাকে বিবেচনায় নিয়ে দেওয়া হয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ২০২০ সালে রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ থেকে পুনরায় জিপিএ-৫ পান সুবর্ণা। তাঁকে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়েও এই শিক্ষাবৃত্তির আওতায় রাখা হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি সুবর্ণা শিল্পকলা একাডেমি থেকে চার বছর মেয়াদি উচ্চাঙ্গসংগীত প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে শেষ করেছে। আবৃত্তির প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে গান ও কবিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি।
সুবর্ণার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কি জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত। পড়াশোনা শেষে বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডার হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।’