বাংলাদেশ মেডিকেল অলিম্পিয়াডে রানার্সআপ অদম্য নাদিমের দল
প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী নাদিম মাহমুদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার হরিপুর মিয়াপাড়া গ্রামের নাদিম মাহমুদ এই শিক্ষাবৃত্তির সহযোগিতায় এইচএসসি ও এমবিবিএস পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী। নাদিম মাহমুদসহ তিনজনের টিম ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অলিম্পিয়াড কমপিটিশন ২০২২’ এ রানার্সআপ হয়েছেন। তাঁদের এই অর্জন ও অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন নাদিম মাহমুদ।
বাংলাদেশ মেডিকেল অলিম্পিয়াড কমপিটিশন-২০২২ এর শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর। ফাইনাল পর্ব হয় ২৪ ডিসেম্বর। আয়োজক হিসেবে ছিলেন প্ল্যাটফর্ম, প্লানেটারি হেলথ অ্যাকাডেমি, মেডিকেল গ্রুপ, সায়েন্টিফিক পার্টনার এবং সাপোর্টার গ্রুপ হিসেবে আরও কিছু সংস্থা। যাইহোক সবগুলো ধাপ পেরিয়ে রানার্সআপ হয়েছি আমরা।
এই অর্জনের পথটা একটু কঠিন ছিল। একটু পেছনে যাই, আমার কলেজের সহপাঠী মো.মোহতাসিম রহমান মাহির আমাকে জানানোর আগেই একটা কমপিটিশনে আমার নাম রেজিস্ট্রেশন করে ফেলে। পরে ফোনে জানায়। আমি বুঝতে পারছিলাম না, আমি হ্যাঁ করব নাকি না করব। সব মেনে সম্মতি সূচক রিপ্লাই দিয়ে স্যারদের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। আমরা ৩ জনের একটা টিমে ছিলাম— আমি, মোহতাসিম রহমান মাহির এবং সাইফুল ইসলাম। আমরা ৩ জন ই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফাইনাল প্রফ পরীক্ষার্থী।
পরে আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী স্যার, ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ সরকার এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. সুলতানুল আবেদীন তিতাস স্যারের সঙ্গে দেখা করি। স্যার আমাদের খুব সুন্দর করে পরবর্তী ধাপের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন এবং খোঁজ খবরও নিয়েছেন।
তারপর গত ১৭ ডিসেম্বরে আমরা জোনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণ করি। জোনাল রাউন্ডে আমদের ভেতরে রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ দুইটা বিভাগ ছিল। দুইটা বিভাগের প্রায় প্রত্যেকটা মেডিকেল থেকে কমপক্ষে একটা করে দল অংশগ্রহণ করেছিল। এই জোনাল রাউন্ডে দ্বিতীয়স্থান অধিকার করে সেমিফাইনাল যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করি।
এটা যেহেতু জাতীয় পর্যায়ে খেলা হচ্ছিল তাই বাংলাদেশকে ৮টা জোনে বিভক্ত করে প্রতিটা জোন থেকে দুটা করে নিয়ে মোট ১৬টা টিম সেমিফাইনালে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।
২৪ ডিসেম্বর সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। সেমিফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয় স্যার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ঢাকায়। এখানে ১৬টা টিম থেকে ৮টা টিমকে বাছাই করে ফাইনাল এ যাওয়ার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ আমরা ফাইনাল এ যাওয়ার সুযোগটা পেয়ে যাই।
ফাইনাল কমপিটিশনটা বার্জার মেথডে হয়েছিল। মোট ২৫টা প্রশ্ন, এর ভেতরে কয়েকটা প্রশ্ন ডিসকোয়ালিফাই করে দেওয়ায় পরে ২২টার মতো প্রশ্ন ছিল কিন্তু উত্তর করতে পারার সুযোগ মাত্র ৬/৭টি হয়েছিল। কিন্তু এই মেথডে খেলাটা অনেকখানি বিপজ্জনক এবং অপশন ছাড়া উত্তর করাটা অনেক কঠিন ছিল। তবুও আলহামদুলিল্লাহ! আমরা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। রানার্সআপ হওয়ার বিষয়টা আমার জীবনে একটা স্বপ্নের মতো ছিল।
ফাইনাল রাউন্ড শেষে আমার সব চাইতে বড় অর্জন হলো আমাদের কলেজের সম্মান, আমার শিক্ষকদের সম্মান। তাদের খুশির কারণ হতে পারে আমি অনেক আনন্দিত।
সবশেষে, সবাই আমার জন্যে, আমার টিমের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন বাংলাদেশকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কমপিটিশনে সর্বোচ্চ সাফল্যে অর্জন করতে পারি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সুনাম আরও বৃদ্ধি করতে পারি।