টিউশনির প্রথম বেতন দিয়ে বাবাকে জামাকাপড় কিনে দেব— এটা ভাবতেই চোখ ভিজে যায়

প্ল্যানেটারি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া-প্রথম আলো ট্রাস্টের মেডিকেল শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত অদম্য মেধাবী আমানুল্লাহ হোসাইন।

প্ল্যানেটারি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া-প্রথম আলো ট্রাস্টের মেডিকেল শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত অদম্য মেধাবী আমানুল্লাহ হোসাইন। আমানুল্লাহর বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গয়েশবাড়ি গ্রামে। বাবা আজগার আলী ভ্যানচালক। চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও কঠোর মনোবল নিয়ে এগিয়েছেন আমানুল্লাহ। এবার ভর্তি হয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে। শিক্ষাবৃত্তির টাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে কিছু আয় করেন। সেই আয় থেকে পরিবারে একটু সাপোর্ট দেওয়া চেষ্টা করেন। টিউশনির প্রথম মাসের বেতন দিয়ে বাবাকে প্রথম বার কিনে দিলেন জামাকাপড়। আনন্দঘন এই মুহূর্তের অনুভূতিগুলো লিখেছেন আমানুল্লাহ নিজে। পড়ুন বিস্তারিত তাঁর লেখায়।

‘আব্বু একটা লুঙ্গি লাগবে। এইটা ছিঁড়ে গেছে। মেসের সবার সামনে যাইতে পারি না। বাবা বললেন, আচ্ছা কিনে দিবনে, ছেঁড়াটা বাড়ি নিয়ে আসিস।’ বাড়িতে আনার পর ওই ছেঁড়া লুঙ্গিটা আব্বু পড়ত আর আমি নতুনটা নিয়ে গিয়ে পড়তাম।

মেডিকেলে ভর্তির দিন কুমিল্লা যেতে আব্বুর খারাপ লাগছিল (পরে অবশ্য মাইগ্রেশনে রংপুরে মেডিকেলে চলে এসেছি)। আমি বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আব্বু বলেন, ওখানে সবাই অনেক বড়, বড় মানুষেরা থাকবে, আমার যাইতে লজ্জা করে। আমি তখন বললাম, ওই বড় বড় ব্যক্তিও ওখানে যে যোগ্যতার বলে যাবে, তুমিও সেই যোগ্যতা বলেই যাবে। কেউ তোমাকে কিছু বলার সাহস পাবে না। দেখবা আরও খুশি হবে সবাই। সত্যিই কুমিল্লাতে আব্বুকে দেখে বড় বড় মানুষ, টিচার, প্রিন্সিপাল সবচেয়ে বেশি খুশি হইছিল যাদের মধ্যমণি ছিল আমার বাবা। আরও বেশি খুশি হয়ছিল এই কথা শুনে যে, আমার আব্বা একজন ভ্যানচালক। আমার আব্বু অসুস্থ না থাকলে অন্য যেকোনো ছেলের থেকে আমি কম কষ্টে পড়াশোনা করতে পারতাম। কারণ তাঁর চিকিৎসার জন্য বিভিন্নভাবে ধারদেনা করে ও হাতের কাছে যা ছিল তা দিয়ে ১০ লক্ষ টাকার অধিক খরচ হয়েছে। এখনো প্রতিদিন প্রায় ১০০ টাকার ওষুধ লাগে।

টিউশনির প্রথম মাসের বেতন দিয়ে বাবাকে প্রথম বার কিনে দিলেন জামাকাপড়। আনন্দঘন এই মুহূর্তের অনুভূতিগুলো লিখেছেন আমানুল্লাহ নিজে।

যাইহোক, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আমাকে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ করে দিলেন। আমি নিজে টিউশনি করে কিছু আয় করতে পারি। আমার জীবনের সেই শতভাগ হালাল আয় দিয়ে বাবাকে কিছু কিনে দেব—এটা ভাবতেই চোখ ভিজে যায়। বাবা—আমার হালাল টাকা দিয়ে তোমাকে একটু সাজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

বাবা, এর আগে তুমি ছেঁড়া লুঙ্গি পড়তা না? তোমার ছেলে আজ দোকানদারকে বলছে, ‘আপনার দোকানের সবচেয়ে দামি এবং ভালো লুঙ্গিটা আমাকে দেখান। সেটাই নেব।’ পাঞ্জাবির দোকানদারকেও তাই বলেছি। আর বাকি টাকা যতটুকু লাগবে, সব দিয়ে তুমি আবার এনায়েতপুর হাসপাতালে যাইবা ইনশাআল্লাহ।

তুমি আমার গর্ব। কারণ আমার কত বন্ধু-বান্ধবী তাদের মা-বাবাকে নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করে কাঁদত। তখন আমি তোমার ধৈর্য দেখে নিজেই অবাক হতাম আর ভাবতাম, আদৌ কি তুমি মানুষ নাকি ফেরেশতা?

যা হোক বাবাকে নিয়ে এই লেখার কারণ মূলত দুইটা।

এক. আমার স্টুডেন্টদের বলব— তোমার বাবা-মা যাই হোক না কেন, তাঁরা তোমার বাবা-মা। তাঁরাই তোমার সবচেয়ে আপনজন। তাঁরাই তোমার জান্নাত।

দুই. আমার বাবা-মায়ের কষ্টের কিছুটা প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা। পৃথিবীর সকল বাবা-মায়েরা ভালো থাকুক, এই প্রত্যাশা সব সময়।