ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তি
ধরেছেন পরিবারের হাল, করেছেন পাকা বাড়িও
বাবা সবার পাকা ঘর বানিয়ে দিলেও আমরা কখনো পাকা ঘরে থাকতে পারিনি, নিজের ঘরটুকু ছিল ভাঙা,এমনটাই বলছিলেন ইমাম হোসেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে ইমাম হোসেনের বাড়ি। ৪ ভাইবোন মা-বাবাসহ ৬ জনের পরিবার। কিন্তু একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন রাজমিস্ত্রি বাবা দিনিয়ার আলী গাজি। বাবার আয় ছিল খুবই সীমিত, যা দিয়ে কখনোই সবার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হতো না। বড় ভাই ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর অভাবের কারণে আর এগোতে পারেনি। বাবার কষ্ট কমাতে সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। তিনিও লেগে পারলেন রোজগারে।
প্রথম আলো ট্রাষ্ট ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে এই শিক্ষাবৃত্তি না পেলে হয়তো কখনোই পড়াশোনা করার সুযোগ হতো না।
মেধাবী ছেলে ইমাম হোসেন ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। পরে ২০১২ সালে জোবেদা সোহরাব মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ওই সময় তাদের গ্রামে একমাত্র তিনিই জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলেন। ভালো ফলাফল পেয়ে আনন্দের পাশাপাশি সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটাও যেন বেড়ে যায় তাঁর। কিন্তু পরিবারের পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালানো যে আর সম্ভব না। সামনে পড়াশোনা কীভাবে করবেন, সে চিন্তাটাও চেপে বসে। এরই মাঝে মামার পরামর্শে ঝিনাইদহের ইনস্টিটিউট আব হেলথ টেকনোলজিতে (ল্যাবরেটরি বিভাগ) পরীক্ষা দিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। কিন্তু সেখানেও তো অর্থের প্রয়োজন। একপর্যায়ে পড়াশোনার খরচ জোগান দিতে তিনিও কাজে লেগে পড়েন।
একদিন একটি চিঠি হাতে পেয়ে জানতে পারেন প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি পেতে যাচ্ছেন, মনে হলো যেন স্বপ্ন পূরণের রাস্তাটা সহজ হয়ে গেলো। এবার আর পড়াশোনায় কোনো সমস্যা রইল না, শিক্ষাবৃত্তির টাকা হাতে পেয়েই ভর্তি হয়ে গেলেন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে। ২০১৬ সালে সাফল্যের সাথে ডিপ্লোমা শেষ করেন। বর্তমানে তিনি কর্মরত আছেন ফরিদপুরে অবস্থিত ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে।
প্রথম আলোর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘প্রথম আলো ট্রাষ্ট ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে এই শিক্ষাবৃত্তি না পেলে হয়তো কখনোই পড়াশোনা করার সুযোগ হতো না। সাফল্যের সঙ্গে পড়াশোনা শেষ করে নিজের পরিবারকে করেছেন সচ্ছল, গড়েছেন স্বপ্নের পাকা বাড়িও।’