বৃত্তি না পেলে এসএসসির পরই থেমে যেত আমার পড়াশোনা
আমি ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। অনেকের খেলাধুলা, আর্ট করা, গান করা ভালো লাগলেও আমার পড়াশোনা করতেই ভালো লাগত। আমি যখন ৪ বছরের ছিলাম তখন আমার বাবার ব্যবসায় লস হয়েছিল। তখন আমাদের বাড়ি, জায়গা সব বিক্রি করে ব্যবসার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। পরে কুড়িগ্রাম সদর থেকে একটু দূরে অল্প জমি কিনে টিনের বাড়ি করে। বাবা আবার বিস্কুট, চানাচুরের বিজনেস শুরু করেন। ২০১১ সালে, আমি যখন জেএসসি পরীক্ষা দেব, তখন আমাদের পরিবারে আবার বিপর্যয় নেমে আসে। বাবার ব্যবসায় আবার লস হলে আমাদের বসতবাড়ির ৫ শতক জমি রেখে বাকিটুকু বিক্রি করে দিতে হয়। এদিকে বাবার রোজগারের পথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় পরিবারে ভরণ পোষণ, দুই ভাই-বোনের পড়াশোনা খরচ চালানো আমার বাবার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
পরিবারের এই অবস্থায় বাবা আমার এক চাচার সাহায্যে ভ্যানগাড়ি চালানো শেখেন। ভ্যান চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ জোগাতে পারলেও আমাদের পড়াশোনার খরচ জোগানো কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এই সময়টাতে বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে আমার ভাইকে পড়াশোনা করাইতে চান। কিন্তু আমার তো পড়াশোনা করতে ভালো লাগে। তা ছাড়া ভালো স্টুডেন্ট হওয়ায় আমার স্যারদের কাছে টিউশন ফি হাফ লাগত, কোন কোন স্যার টাকা নিতেন না। আমি তখন সাহস বলে ফেললাম ‘আমি বিয়ে করব না, পড়াশোনা করব’। আমার এই দৃঢ়তায় বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসে পরিবার। ফলে আমিও আরও ভালো করে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পেরেছিলাম।
এভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলাম। আমার স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় শাহজাহান স্যার প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সফি আংকেলের সঙ্গে কথা বলেন আমার বিষয়ে। সব শুনে তিনি আমাকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন করেন। প্রথম আলোয় সেটা ছাপা হয় এবং আমাকে প্রথম আলো অদম্য মেধাবী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। আমাকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী বৃত্তি দেওয়া হয়। এই বৃত্তি সহায়তায় আমার শিক্ষার পথ প্রশস্ত হয়। আমি প্রথম আলোর কাছে চিরকৃতজ্ঞ, প্রথম আলো ট্রাস্ট পাশে না থাকলে হয়তো এসএসসি পাস করা পর্যন্তই থেমে যেত আমার পড়াশোনা।
আমি আমার ফ্যামিলি থেকে প্রথম গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করা মেয়ে। আমি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। প্রত্যেক মানুষেরই স্বপ্ন থাকে। মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান। আমারও একটা স্বপ্ন আছে। বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যেতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।