‘এই সফলতা আমাকে কাঁদায়, কারণ সুখবরটা বাবা দেখে যেতে পারেননি’

অদম্য মেধাবী মো. ফেরদাউস ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদে যোগদান করেছেন।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বাড়ি অদম্য মেধাবী মো. ফেরদাউস ইসলামের। অভাব-অনটনের সংসারে ছোট থেকে নানা প্রতিকূলতা দেখেছেন । তবে সাহস নিয়ে সেই প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। যোগদান করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদে। এখন সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন।

ফেরদাউস ইসলাম ২০১২-১৩ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসিতে ভর্তি হন। বিভাগ মনঃপূত না হওয়ায় পরের বছর পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে সুযোগ পান। গত বছর এই বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পরে চাকরিতে যোগদান করেন।

ফেরদাউস তাঁর বেড়ে ওঠার গল্পটা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি ছিলাম তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজো। বাবা রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন (২০২১ সালে আগস্ট মাসে বাবা মারা যান)। মা গৃহিণী ছিলেন। রিকশা চালানোর আয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। এর মধ্যে তিন ভাইয়ের পড়াশোনা। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে প্রথম ছিলাম আমি। উপজেলা সদর থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। আমার এই সফলতার খবর প্রথম আলোর প্রকাশ করে। আমাকে শিক্ষাবৃত্তির আওতায় নেয়। এই বৃত্তি না পেলে আমার পড়াশোনা চালানো হয়তো সম্ভব হতো না। রিকশা চালিয়ে বাবা কতটুকুই বা সাপোর্ট দিতে পারতেন। এ সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ফেরদাউস।...আমি হয়তো বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু এই সফলতা আমাকে কাঁদায়। কারণ সুখবরটা বাবা দেখে যেতে পারলেন না। এর আগেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।’

পরক্ষণেই যুক্ত করে ফেরদাউস বলেন, ‘২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার পাশে ছিল। বাবা হয়তো এ জন্য সাহস পেয়েছিলেন পড়াশোনার করানো। নয়তো আমাকে বাবার মতো কাজে যেতে হতো। এ জন্য সব সময় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি।’