স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ার, হলেন সফলও

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে বিডিএস কোর্সে ভর্তি হওয়া অদম্য মেধাবী মাফিউল হাসান।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি গ্রামের ছেলে মো. মাফিউল হাসান। এ বছর ভর্তি হয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে বিডিএস কোর্সে। টানাপোড়েনের সংসারে মাফিউলের এই সফলতা অন্যরকম মাত্রা যোগ করেছে। চার ভাই, এক বোন ও মা-বাবাকে নিয়ে মাফিউল হাসানদের পরিবার। স্কুলশিক্ষক বাবার আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর স্কুলশিক্ষক বাবা গোলাম মোস্তফা হঠাৎ মারা যান। পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে মাফিউলের মা আরজিনা বেগম অথই সাগরে পড়ে যান। বাবার অবর্তমানে সন্তানেরা হারিয়ে ফেলে তাদের চলার পথ। কিন্তু স্বশিক্ষিত মা আরজিনা বেগম মনোবল হারাননি। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। অদম্য চেষ্টা ও দৃঢ় মনোবল আরজিনা বেগমের যমজ তিন সন্তানকে এগিয়ে নিয়েছে। আঁধার মাড়িয়ে ছড়িয়েছে আলো।

যমজ তিন ভাই রাফিউল হাসান, শাফিউল হাসান ও মাফিউল হাসান তারা একসঙ্গে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

বাবাহীন টানাপোড়েনের সংসারে যমজ তিন ভাই শাফিউল হাসান, মাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান তারা একসঙ্গে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান। এ খবর প্রথম আলোয় প্রকাশ হলে আলোড়ন ফেলে দেয়। পরে তাদের পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে যমজ তিনজনকেই ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তি সহায়তা নিয়ে যমজ তিন ভাই বগুড়ার সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ থেকে মাফিউল ও রাফিউল জিপিএ-৫ এবং সাফিউল জিপিএ-৪.৯২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। এরই মধ্যে খবর এল মাফিউল মেডিকেলে বিডিএস ও রাফিউল ও সাফিউল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (গুচ্ছ) পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। যমজ তিন ভাইয়ের সাফল্যে একালাবাসীসহ সকলেই অনেক খুশি হয়েছে। মাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসানকে স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তি দেবে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল।

সন্তানের এমন সাফল্যে আরজিনা বেগম বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে সংসার ও পাঁচ সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে অনেক দুঃখ-কষ্ট সইতে হয়েছে। অভাবের তাড়নায় স্বামীর রেখে যাওয়া সব সম্পদ বন্ধক রাখতে হয়েছে। সংসারের চাপে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে বড় ছেলে। এমতাবস্থায় ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার সন্তানদের পাশে দাঁড়িয়েছে, যার জন্য ওদের পড়াশোনা করা সম্ভব হয়েছে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে বিডিএস পড়ার সুযোগ পাওয়া মাফিউল হাসান বলেন, ‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জায়গায় যেতে চাই। মানুষের কল্যাণে আমরা আত্মনিয়োগ করতে চাই।’