বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কলসা তিয়রপাড়া গ্রামের ছেলে মো.শহীদুল্লাহ হাবীব। ছোট থেকেই নানা প্রতিকূলতা দেখেছেন তিনি। সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। এ মাসেই পদোন্নতি হয়েছে শহীদুল্লাহর। তিনি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপাল অফিসার হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইনভেনটরি বিভাগে অফিসার-১ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শহীদুল্লাহ হাবীব ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
পাঁচ ভাইবোন বড় সংসার তাদের। এদিকে পরিবারের অবস্থা খুব নাজুক। বাবা একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তিনি চাতালে কাজ করতেন। শহীদুল্লাহ যখন তৃতীয় শ্রেণিতে, তখন বাবা বললেন, পড়াশোনা করে কী হবে? কাজ করলে সংসারের কিছুটা উপকারে আসবে। এই বলে শহীদুল্লাহকে বাদাম কিনে দিলেন। সারা দিন বাদাম বিক্রি করতেন। যা টাকা পেত, তাই বাবার হাতে দিত। পরে তাঁর স্কুলের এক শিক্ষকের সহায়তায় আবার স্কুলে ভর্তি হন। পড়াশোনার পাশাপাশি বাদাম বিক্রিও অব্যাহত ছিল। এভাবে ২০০৮ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পুরো উপজেলায় মেধা তালিকায় ১০ম হয়ে বৃত্তি পান তিনি।
শহীদুল্লাহ বলেন, আদমদীঘিতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি নিয়ে পড়েছি। বাবা চাতালে সারা রাত (ধান ভাঙানো, চাল তৈরির) কাজ করতেন। বাবার সঙ্গে চাতালে কাজ করতাম। দিনের বেলা স্কুলে যেতাম। বিকেলে খেলতাম। দিনের কোনো এক ফাঁকে ঘুমাতাম। আমার সহপাঠী বা বন্ধু কেউ বুঝতেই পারত না যে আমি সারা রাত চাতালে কাজ করতাম। সে সময় মা অসুস্থ হলো। আমাদের নিজস্ব কোনো বাড়ি ঘর নাই। তাই চাতালের পাশে থাকার ব্যবস্থা ছিল। রাস্তার বারান্দায় কাঁথা-বালিশ নিয়ে ঘুমাতাম। রাস্তার লাইটের আলোতে পড়াশোনা করতাম। ভোরবেলা রাস্তা থেকে চলে আসতাম। আবার বস্তা সেলাইয়ের কাজও করেছি।’
যা হোক, অবর্ণনীয় এই পরিশ্রম শহীদুল্লাহকে হতাশ করেনি। ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পান। তাঁর ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। কিন্তু পরিবারের এই অবস্থায় কত দূরই বা যেতে পারবেন! তা ছাড়া বাবার বয়সও তখন ৬০ ছুঁই ছুঁই। চিন্তা করলেন শর্টকাটে কিছু করতে। পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হলেন সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাবে। ওই সময়টাতে প্রথম আলোয় তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলো। দেওয়া হলো ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি। বৃত্তি সহায়তায় ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা ডিগ্রি শেষ করে প্রাণ-আরএফএল-এ যোগ দেন। এখানে ৬ মাস চাকরি করার পর ওয়ালটনে চাকরি সুযোগ পান। বর্তমানে এখানেই কর্মরত তিনি।
নিজের স্বপ্ন ও অনুভূতি প্রকাশ করে শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে ভালো আছি। বাবা-মা অনেক খুশি। তা ছাড়া নিজেকে আরও ডেভেলপ করতে চেষ্টা করছি। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ভর্তি হয়েছি। এখন দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়ছি। পাশাপাশি সরকারি চাকরির চেষ্টাও করছি। সবকিছুর জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানাই।’