খাইরুম ইসলামের বাবা মারা যান ২০০৭ সালে। মা ছিলেন শিক্ষক। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েন মা। কিভাবে চলবে সংসার, মেয়ের পড়াশোনাই বা করাবেন কীভাবে। তখন আত্মীয়স্বজন ও স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যান খাইরুম। কিন্তু সব সময় তো আত্মীয়স্বজনেরা সহায়তা করতে পারেন না। তাই খাইরুম নিজেই টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাতে থাকেন। এভাবে পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে ঢাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান। পরে প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তির আওতায় এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেন তিনি। সম্প্রতি তিনি প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ড. ফজলে এলাহীর সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫ জন অসচ্ছল অদম্য শিক্ষার্থীকে সহায়তা দেওয়া হয়। এই ৫ জন ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে খাইরুম ইসলাম জিপিএ-৫ পান। বাকিদের মধ্যে ২ জন এ গ্রেড, ২ জন এ মাইনাস গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হন। খাইরুম ইসলাম ভালো ফল করায় ড. ফজলে এলাহীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বৃত্তি সহায়তা নিয়ে অসচ্ছল দরিদ্র কোটায় ২০১৭-১৮ সেশনে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে সিজিপিএ-৩.৬৭ পেয়ে বিএসসি এবং সিজিপিএ-৪ পেয়ে এমএসসি সম্পন্ন করেন।
খাইরুম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা ভালো লাগত। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে টিউশনি করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে ক্লাসমেট ও জুনিয়রদের পাঠ বুঝিয়ে দিতাম। এগুলো থেকে উপলব্ধি করি যে, পড়াতে আমার ভালো লাগে। সে জন্যই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেই। ভবিষ্যতে তাই নিজেকে পড়াশোনার সঙ্গে জড়িয়ে রাখতে চাই। দেশের বাইরে থেকে পিএইচডি করে অধ্যাপক হতে চাই। আমার মতো অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও আগ্রহী করে তোলে একটা নতুন প্রজন্ম তৈরিতে অংশীদার হতে চাই।’