সড়কে প্রাণ গেল অদম্য মেধাবী জাহাঙ্গীরের

জাহাঙ্গীর আলম
ছবি: সংগৃহীত

‘অহন আমগোরে কে দেখব?’—এই বলে বিলাপ করছিলেন মা জহুরা বেগম। পাশে কাফনে মোড়ানো ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের (২৮) লাশ। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। মায়ের বিলাপে তখন ভারী হয়ে উঠেছিল শেরপুরের নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের পিপুলেশ্বর গ্রামের জাহাঙ্গীরদের বাড়ির পরিবেশ।

নালিতাবাড়ীর গোল্লারপাড় এলাকায় শেরপুর-নালিতাবাড়ী সড়কে গত বুধবার রাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উল্টে গেলে যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম আহত হন। প্রথমে তাঁকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

জাহাঙ্গীর আলম
ছবি: সংগৃহীত

দরিদ্র পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম নালিতাবাড়ীর উত্তর নাকশী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং নাজমুল স্মৃতি সরকারি কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। এরপর তিনি ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার সময় জাহাঙ্গীর আলম অন্যের জমিতে কাজ করে খরচ জোগাতেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর অদম্য মেধাবী হিসেবে জাহাঙ্গীর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পান।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাবা সোবাহান ছিলেন দরিদ্র জেলে। এক বছর আগে তিনি মারা যান। এতে পুরো পরিবার জাহাঙ্গীরের ওপর নির্ভরশীল ছিল। জাহাঙ্গীরের স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করার। এ জন্য তিনি ঢাকায় থেকে চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতির পাশাপাশি টিউশনিও করতেন। বাড়িতে জাহাঙ্গীরের মা, দুই বোন ও ছোট ভাই থাকে। বুধবার বাড়ি ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাহাঙ্গীরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুর শোকে বিলাপ করছেন জহুরা বেগম। ‘আমার বাবা চাকরি পাইয়া আমগোর সংসারে উন্নতি করব, সব সময় এই কথা বলত। কিন্তু সব স্বপ্ন নষ্ট হইয়া গেল।’—এই বলে বিলাপ করছিলেন তিনি।

জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই বোরহান উদ্দিন শেরপুর সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকে পড়েন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইয়া ঢাকায় টিউশনি করে আমার পড়ালেখা ও সংসারের খরচ দিতেন। বাড়িভিটার ১৫ শতক জমি ছাড়া আমাদের কোনো কৃষিজমি নেই। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’

গতকাল বিকেলে স্থানীয় উত্তর নাকশী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পিপুলেশ্বর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে জাহাঙ্গীরকে দাফন করা হয়।