গাইবান্ধার সেই যদুলাল রবিদাস এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি এবার গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান।
যদুলাল রবিদাস জানালেন, ‘এসএসসিতে (২০২২) জিপিএ-৫ পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। এরপর উচ্চশিক্ষায় লেখাপড়ার খরচ নিয়ে হতাশায় পড়েছিলাম। টাকার অভাবে পড়ালেখায় অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ সময় প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার পাশে দাঁড়ায়। এই বৃত্তি সহায়তায় এইচএসসিতে পড়াশোনা করেছি।’ব্যাক্তিক পর্যায়ের একজন দাতার সহায়তায় প্রথম আলো টাস্টের ব্যবস্থাপনায় যদুলালকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছিল।
যদুলালের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের মধ্যফলিয়া গ্রামে। তার বাবা বাচালাল রবিদাস (৭০) জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। বয়সের ভাঁড়ে এখন কাজ করতে পারেন না। অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। মা মালতী রাণী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। চার শতক বসতভিটায় একটি টিনের ঘর তুলে বসবাস করছেন।
যদুলাল রবিদাস জানান, ‘আমার সকালের নাশতা বলতে ছিল পান্তাভাত। তারপর ভাইয়ের দোকানে জুতা সেলাইয়ের কাজ। কাজ থেকে ফিরে বিদ্যালয়ে। টিফিনের টাকা ছিল না। পানি খেয়ে টিফিনের সময় কেটেছে। বিকেলে বাড়িতে ফিরে নাশতা করেছে মুড়ি দিয়ে। তারপর আবার জুতা সেলাইয়ের কাজ। রাত আটটা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত ও ভোরে পড়াশোনা করতে হয়েছে। জুতা সেলাইয়ের কাজের ফাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছি। পরিশ্রম করে লেখাপড়ার কারণে এই ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
তার বিষয়ে গাইবান্ধা আবদুল হাই আকবর আলী উচ্চবিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক আবদুর রব বলেন, যদুলাল রবিদাস দরিদ্র হলেও সে খুব মেধাবী। পড়ালেখায় তার যথেষ্ট আগ্রহ। তাই তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
যদুলাল রবিদাস চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। বড়ভাই সুখচান রবিদাস ও চতুর্থ ভাই সুমন রবিদাস। তারা জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। দ্বিতীয় ভাই সুজন চন্দ্র রবিদাস হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। এখন চাকরির চেষ্টা করছেন। সুজন রবিদাস ২০১৩ সালে প্রথম আলো ট্রাস্ট থেকে বৃত্তি পেয়েছিলেন। তার দুই বোন ভারতী রাণী ও আরতী রাণীন বিয়ে হয়েছে।
তাঁর বাবা বাচালাল রবিদাস ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বললেন, এত দিন প্রথম আলো ট্রাস্ট টাকা দিয়েছে। পড়ালেখার সমস্যা হয়নি। এখন উচ্চ ক্লাসে পড়াতে টাকা পাব কোথায়! ব্যাংকার হতে চায় যদুলাল।