এসএসসির ফল প্রকাশের দিনেও অন্যের জমিতে ধান কাটছিলেন, সেই শামীম পেলেন সরকারি চাকরি

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জনাব মো. নাজমুল হক সদ্য যোগদান করা মো.শামীম রেজাকে অভিনন্দন জানান। ৩০ মে ২০২৩,নওগাঁর বদলগাছীতে।

ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত মো. শামীম রেজা সম্প্রতি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে হিসাবরক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। গত ৩০ মে যোগদান করেছেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায়। শামীম রেজার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে জীবনসংগ্রামের গল্প। এই গল্পটা শুনলে মনের বল একটু হলেও বেড়ে যাবে বৈকি।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় শ্রীপুর গ্রামের ছেলে মো. শামীম রেজা। ছয় শতক জমির ওপর মাটির ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। বাবা নুর ইসলাম প্রামাণিক ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন, এখনো চালান। যদিও ভ্যানটাকে এখন ব্যাটারি চালিত মোটরে রূপান্তরিত করছেন। কিন্তু শামীম যখন স্কুলে পড়তেন তখন গ্রামের রাস্তা কাঁচা ছিল। তখন শামীমের নিত্য দিনের কাজ ছিল, বাবার সঙ্গে ভ্যান ঠেলে বাজারে পৌঁছে দেওয়া। এটা করেছেন এসএসসি পাস করা অবধি।

চাকরি পাওয়ার খুশির খবর দিতে আসেন প্রথম আলোর কার্যালয়ে।

বাবার ভ্যান চালানোর আয়ে সংসার ঠিকমতো চলত না। তাই পরিবারে কিছুটা জোগান দিতে শামীম অন্যের জমিতে ধান কাটা, ধান লাগানোসহ নানা কাজ করেছেন। যেদিন এসএসসির ফল প্রকাশ হয়, সেদিনও শামীম অন্যের জমিতে ধান কাটার কাজ করছিলেন। সন্ধ্যার দিকে জানতে পারেন, তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজশাহী বোর্ডের সেরা সাতে জায়গা করে নিয়ে তাক লাগিয়ে দেন শামীম।

শামীমের এই সাফল্য নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পরে পড়াশোনার প্রতি তাঁর অদম্য ইচ্ছা ও মেধা শক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় বাগমারা কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ফ্যাকাল্টি থেকে ২০১৮ সালে মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছেন। ২০২১ সালে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর, এ বছর বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে হিসাবরক্ষক পদে নিয়োগ পেলেন তিনি।

এটাই ছিল তাঁর প্রথম চাকরি। তাঁর পরিবারে তো বটেই, তাঁর পাড়া, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে প্রথম কেউ সরকারি চাকরির সৌভাগ্য অর্জন করলেন। শামীমের সঙ্গে কথা বলার সময় মায়ের কথা সামনে আনলেন। তাঁর হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু পালন করে শামীমের পড়াশোনায় অনেকটা জোগান দিয়েছেন।

শামীম রেজা বলেন, ‘এসএসসি পর্যন্ত পড়তে পারব, এ আশাও ছিল না। ভালো ফল করায় প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোর বাগমারা প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ মামুনকে ফোন করেন। তিনি এসে আমার সব জেনে নিউজ করেন। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সবকিছুর জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার এই সাফল্যে বাবা-মা, পাড়া-প্রতিবেশিসহ সবাই অনেক খুশি। এখন পরিবারকে, ছোট ভাইকে সহায়তা করতে পারব— এটাই ভালো লাগার বিষয়। আমার প্রত্যাশা আরও ভালো কিছু করার।’