সেরাদের সেরা হলেন ঐশী, জিতলেন লাখ টাকার টেলিস্কোপ

অদম্য মেধাবী ঐশী মনজুর সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ বিজ্ঞান কুইজে অংশ নিয়ে জিতে নেন লাখ টাকার বেশি দামি টেলিস্কোপ। সঙ্গে আরও অনেক উপহার।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভূরুলিয়া গ্রামের অজ-পাড়াগাঁয়ের অদম্য মেধাবী ঐশী মনজুর। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। বর্তমানে অনুরন-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে। এসএসসির আগ পর্যন্ত দুই প্রতিবেশীর বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ আর অবসরে মায়ের দরজির কাজে সাহায্য করে লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন। এভাবে দারিদ্র্য মোকাবিলা করে ২০২০ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান তিনি।

বিজ্ঞান বিষয়ে জানার আগ্রহ অনেক বেশি ঐশীর। এই আগ্রহ থেকেই সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ বিজ্ঞান কুইজে অংশ নিয়ে জিতে নেন লাখ টাকার বেশি দামি টেলিস্কোপ। সঙ্গে আরও অনেক উপহার।

গ্যোটে ইনস্টিটিউট ও বিজ্ঞানচিন্তা আয়োজিত বিজ্ঞান কুইজের বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা। সেরাদের সেরা হয়ে সকলের মধ্যমণিঐশী মনজুর।
ছবি: গ্যোটে‌-ইনস্টিটিউট

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা ওঠে সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ বাংলাদেশের। এই ফেস্টিভ্যাল আয়োজিত হয়েছে গ্যোটে-ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ ও এর সহযোগী স্কুল ও প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞানচিন্তার যৌথ উদ্যোগে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়েছে আলোচ্য বিজ্ঞান কুইজ। এর চূড়ান্ত পর্ব ও সমাপনী অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয় গতকাল।

গত ১৫ অক্টোবর শুরু হয় এ কুইজের প্রথম পর্ব, শেষ হয় ২৫ অক্টোবর। অনলাইনে আয়োজিত এ পর্বে শিক্ষার্থীরা দুটি লেভেলে কুইজে অংশ নেয়। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা (৭ম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা) অংশ নেয় লেভেল ১-এ। আর ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা) লেভেল ২-এ অংশ নিয়েছে। দুই লেভেলর নির্বাচিত ১০০ বিজয়ী অংশ নেয় চূড়ান্ত পর্বে। ঐশী মনজুর লেভেল ২-এ অংশ নেওয়া ৫০ জনের একজন।

চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিয়ে প্রথম হলাম। এত দামি পুরস্কার পেলাম। হলাম সেরাদের সেরাও। এটা ভাবতেই মন আনন্দে ভরে ওঠে— ঐশী মনজুর।

পরে ৫০ জনের একটি লিখিত পরীক্ষা হয় দ্বিতীয় ধাপে। এই লিখিত পরীক্ষা থেকে ১০ জন বাছাই করা হয়। ঐশী ১০ এ আসেন। এই ১০ জনকে নিয়ে তৃতীয় ধাপে স্টেজে সবার সামনে মৌখিক কুইজে প্রত্যেককে দুটি করে প্রশ্ন করা হয়। সেখানেও সাফল্য তাঁর। সেরা তিনে চলে যান ঐশী। এরপর চতুর্থ ধাপে সেরা তিনজনকে ৩টি করে প্রশ্ন করা হয়। ঐশী ৩ প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

এখানেই শেষ নয়। এর পর শুরু হয় মুখোমুখি কুইজ পর্ব। দুই ক্যাটাগরির সেরা ঐশী মনজুর ও মো. ফাহিম দেওয়ান মুখোমুখি হন বিজ্ঞান চর্চায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে। ফুটবলের চূড়ান্ত মীমাংসা পেনাল্টির মতোই টান টান উত্তেজনায় দম বন্ধ করে অপেক্ষা করেন দর্শকেরা। এ লড়াই জিতে নেন ঐশী মনজুর, সঙ্গে জিতে নেন লাখ টাকারও বেশি দামি টেলিস্কোপ! হয়ে যান সেরাদের সেরা।

সেরাদের সেরা ঐশী মনজুর বলেন, ‘গত ২২ অক্টোবর বিজ্ঞানচিন্তা ফেসবুক পেজে একটা কুইজ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আমি পারব কি পারব না, কোন কিছু না ভেবেই অংশ নিয়েছিলাম এবং বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে জানানো হয় যে আমি সেরা ৫০ জনের মধ্যে আছি। চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিয়ে প্রথম হলাম। এত দামি পুরস্কার পেলাম। হলাম সেরাদের সেরাও। এটা ভাবতেই মন আনন্দে ভরে ওঠে।’