ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই

‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে এ পর্বের অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবরক্ষক মো. কামরুল হাসান।

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে এ পর্বের অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবরক্ষক মো. কামরুল হাসান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় আড়াইসিধা গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। মাঝেমধ্যে কামরুলকেও বাবার সঙ্গে কাজে নামতে হতো। কারণ চার ভাই এক বোন নিয়ে ৭ সদস্য বড় পরিবার বাবার একার আয়ে চালাতে কষ্টসাধ্য ছিল। তাই পড়াশোনা, কাজ আবার পড়াশোনা—এভাবেই চলেছে অনেকটা পথ তাঁর। তবে সব বাধা অতিক্রম করে ২০১২ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন কামরুল। পরে প্রথম আলোর প্রতিনিধি তাঁকে নিয়ে নিউজ পাঠান, প্রথম আলোয় ছাপা হয়।

শুধু নিউজ ছাপিয়ে দায়িত্ব শেষ না করে প্রথম আলো ট্রাস্ট তাঁর বৃত্তির ব্যবস্থাও করে। পড়াশোনার প্রতি তাঁর অদম্য ইচ্ছা ও মেধা শক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ফ্যাকাল্টি থেকে ফিন্যান্স বিভাগে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছেন কামরুল। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে হিসাবরক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

টানাপোড়েনের সংসার থেকে সফল হওয়ার গল্প, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন—এ সবকিছু নিয়ে কামরুল হাসানের জীবনের নানা গল্প উঠে আসে ১০ জুন ২০২৩, শনিবার, বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

কামরুল হাসান বলেন,‘বড় পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। বাবার একার আয়ে সংসার চলত না। তাই বাবার সঙ্গে কাজ করতাম। এভাবে কাজ, পড়াশোনা করে ভালো ফল করি। বৃত্তি পাই। বৃত্তি পেয়ে ২০১৪ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পাই। ২০১৪-১৫ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। পরে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে ২০১৫-১৬ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। স্নাতকেও আমাকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এই বৃত্তিই আমার একমাত্র ভরসা ছিল।’

মা-বাবার অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে কামরুল জানান, ‘গত ১৫ মে সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। তাঁরা অনেক খুশি, আমাকে নিয়ে গর্বিত।’

প্রতিটি মানুষের জীবনেই খারাপ সময় আসে। এটার মোকাবিলা করতে হবে— কামরুল হাসান।

এরপরের স্বপ্নটা কি? কামরুল বললেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক এবং বিসিএসের জন্য চেষ্টা করছি।’

পরক্ষণে কামরুল যোগ করে বলেন, ‘আসলে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি না পেলে আমার পড়াশোনা সম্ভব হতো না। এই বৃত্তি ভরসার জায়গা থেকেই পড়াশোনা চালাতে পেরেছি।

আর চালাতে পারছি না, সেই সময়ে নিজেকে কীভাবে সামলেছেন আপনি? এর উত্তরে কামরুল বলেন, পাঁচ বছর পড়ার পর চাকরি পাওয়ার সময়টাতে হতাশা আসে। পড়াশোনায় থাকার সময়ই চাকরির পড়া চালিয়ে গেছি। সে জন্যই সফল হয়েছি।’

এখন যারা অদম্য মেধাবীরা আছে তাদের জন্য কামরুলের পরামর্শ হলো, ‘প্রতিটি মানুষের জীবনেই খারাপ সময় আসে। এটার মোকাবিলা করতে হবে। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে—সফলতা আসবেই।

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন এই অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।