অদম্য মেধাবী মাহফুজা আক্তার নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়েছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে সফল হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস চূড়ান্ত পর্ব সম্পন্ন করেছেন।
মাহফুজা আক্তার ছোটবেলা থেকে অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নগর সাকোয়া গ্রামে। বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। মাহফুজার বাবার মাথা গোঁজার মতো কোনো জমিজমা নেই। সরকারি খাসজমিতে ছোট একটা ঘর তুলে থাকে মাহফুজার পরিবার। বাড়িতে বিদ্যুৎ না। কেরোসিন তেলের অভাবে রাতে পড়াশোনা করতে পারেনি মাহফুজা। ছোট অন্ধকার ঘরটিতে পড়তে না পারায় দিনের বেলায় গাছের নিচে বসেই পড়ালেখা করতে হয়েছে তাঁকে। দুই ভাইবোনের মধ্যে মাহফুজা ছোট। অর্থাভাবে ভাই পড়াশোনা বন্ধ করে এখন দিনমজুরি করে। টিউশনি করে আর কবুতর পুষে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন মাহফুজা। তারপরও দমে যাননি তিনি। কঠোর পরিশ্রম করে ২০১৫ সালে সাকোয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান তিনি।
পরিশ্রম করলে বিফলে যায় না। তেমনটাই হয়েছে। কলেজে কীভাবে পড়বেন সেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। বৃত্তির ব্যবস্থা হলে দুশ্চিন্তামুক্ত হন তিনি। পড়াশোনার প্রতি মাহফুজার অদম্য ইচ্ছা, ভালো ফল ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল’ থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তি নিয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হন রংপুরের কারমাইকেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। এখান থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ওই বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় ২৯০ তম হয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পান। তাঁর এই সফলতায় তাকে স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তি দেয় এই তহবিল। এমবিবিএস পর্যায়ে ৫ বছর শিক্ষাবৃত্তি দেয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। এ বছর এমবিবিএস পাস করলেন তিনি।
খুশির খবরটা শেয়ার করতে ভোলেননি মাহফুজা আক্তার। ফল প্রকাশের পর অনুভূতি প্রকাশ করে মাহফুজা বলেন, ‘আমার এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন হলো আলহামদুলিল্লাহ। ডাক্তার হয়ে গিয়েছি আল্লাহর অশেষ রহমতে। প্রথম আলো ও ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা আমার এই জার্নিটাকে আর্থিকভাবে সহজ করে দেওয়ার জন্য।’