প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া আলপিনা আক্তার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে যোগদান করেছেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ঘাগড়া ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা আলপিনা মানুষের সেবায় নিজেকে যুক্ত রাখতে চান।
‘আমি রিকশাওয়ালার মেয়ে। কোনো কোনো দিন ঘরে খাবার থাকত না। এরপরও আব্বাকে বলতাম কেরোসিন তেল কিনে আনতে। অল্প কেরোসিনে বেশি সময় ধরে জ্বলার জন্য কুপি বাতির আলো কমিয়ে রাখতাম। এভাবে রাত জেগে পড়তাম।’ কথাগুলো আলপিনা আক্তারের। চার বোনের মধ্যে তৃতীয় আলপিনা। অভাবের সংসারে দুই বোন পড়াশোনা করতে পারেননি, তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি দুই বোন নার্সিং পাস করে সদ্য চাকরিতে যোগদান করেছেন। দুই বোনের চাকরি হওয়ায় পরিবার ও আশপাশের মানুষ বেশ আনন্দিত।
আলপিনার বাবা আবদুস সালাম রিকশাচালক। মা লাইলী বেগম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক আয়ার কাজ করতেন। ২০১৮ মা মারা যান। ওই বছরে হলি চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এর আগে ২০২৬ সালে ঘাগড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০১৮-১৯ সেশনে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হলেও সেখানে পড়াশোনা চালিয়ে যাননি।
মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অল্পের জন্য হয়নি। কিন্তু মনের মধ্যে ছিল তার স্বাস্থ্যসেবা খাতে কাজ করার। তাই নার্সিংয়ে পড়ার মনস্থির করলেন তিনি। পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীন ঢাকা নার্সিং কলেজে বিএসসি ইন নার্সিং পড়ার সুযোগ পান। সেখানে থেকে সম্প্রতি পাস করে বের হয়েছেন তিনি।
আলপিনা আক্তার বলেন ‘আমি বর্তমানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত আছি। আমার এই সফলতার পেছনে রয়েছে এক করুণ কাহিনি। এই সফলতার পেছনে প্রথম আলো ট্রাস্ট, ব্র্যাক ব্যাংক ও সাঁকোর অবদান অনস্বীকার্য। আমার দুঃসময়ে তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদের সহায়তায় পড়াশোনা করেছি। আমি সব সময় আল্লাহর কাছে দু'আ করতাম যেন আমার জীবনে ভালো কিছু করতে পারিক। এখন আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চাকরি করছি। আমি আমার পরিবারের জন্য খরচ করতে পারছি। এতেই আমি অনেক খুশি। আমার স্বপ্ন হলো, আমি দেশের বাইরে থেকে আরও উচ্চতর ডিগ্রি নেব এবং দেশের জন্য কিছু করব।’
উল্লেখ্য যে, আলপিনা আক্তার এইচএসসি পর্যায়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিলের সহযোগিতায় এবং স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে সাঁকো-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিলের সহযোগিতায় পড়াশোনার চালিয়ে গেছেন। শিক্ষাবৃত্তির সহায়তার সঙ্গে তাঁর কঠোর মনোবল ও ইচ্ছাশক্তিই তাঁকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবায় নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেওয়ার ইচ্ছা তাঁর। সুন্দর এই ইচ্ছাগুলো পূরণ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।