‘ঈদে বাবা-মা ভাইবোনদের উপহার কিনে দিতে পারি—এটা অনেক আনন্দের’
কথায় আছে-ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। এই ইচ্ছাশক্তির বলেই এগিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় আড়াইসিধা গ্রামের ছেলে মো. কামরুল হাসান। বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। মাঝেমধ্যে কামরুলকেও বাবার সঙ্গে কাজে নামতে হতো। কারণ চার ভাই এক বোন নিয়ে ৭ সদস্য বড় পরিবার বাবার একার আয়ে চালাতে কষ্টসাধ্য ছিল। তাই পড়াশোনা, কাজ আবার পড়াশোনা-এভাবেই চলেছে অনেকটা পথ তাঁর। এসএসসিতে ভালো ফল করার পর পাশে দাঁড়ায় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় এইচএসসি ও স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করে গত বছর মে মাসে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে হিসাবরক্ষক পদে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় নিয়োগ পেয়েছেন। চাকরি পাওয়ার পর এটা তাঁর প্রথম ঈদুল ফিতর। তাই তাঁর জীবনে এই ঈদটি অন্যরকম একটা ঈদ।
কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি পরিবারের বড় সন্তান। তাই পরিবারের ওপর দায়িত্ব বেশি। চাকরি পাওয়ার আগে টিউশনি করি করে তেমন কিছুই দিতে পারতাম না। এখন বাবা-মা ভাইবোনদের ঈদের উপহার কিনে দিতে পারি। এটা অনেক আনন্দের।’
কামরুল আরও জানালেন, চাকরি পাওয়ার পর এটা আমার প্রথম ঈদ না। তবে প্রথম ঈদের অনুভূতি সত্যি অন্যরকম ছিল। প্রথম বেতনের টাকাটা আব্বা ও আম্মার হাতে দিয়ে ছিলাম। মা-বাবা খুব খুশি হয়েছিল। এটা যে কী আনন্দের, সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
কামরুলের ছোট বোন রিতু আক্তার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। পরে বিয়ে হয়ে যায়। এখন এক সন্তানের (৭ মাস বয়সী ছেলে) জননী তিনি। রিতু আক্তার বলেন, ‘ভাই এখন সরকারি চাকরি করে। তবে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। ঈদে ভাই আমাদের সবাইকে জামা কাপড় কিনে দিয়েছে। আমার ছেলেকে পাঞ্জাবি-পায়জামা, জুতা টুপি কিনে দিয়েছে। আমাদের ঈদের আনন্দ আগের থেকে বেশি এখন।
কামরুলের ঈদ উদ্যাপন একটু অন্য রকম হবে। কারণ ঈদের পর পরই সম্মিলিত ব্যাংকের লিখিত ও বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আছে তাঁর। তাই ঈদের আনন্দ করবেন ঠিকই। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি খেয়ালও রাখবেন। সে জন্য সময়ের সদ্ব্যবহার করতে ভুলবেন না-জানলেন তিনি।
এ সবকিছুর মধ্যেও কামরুল অনেকটা নির্ভার, মনটা স্থির। কারণ খেটে খাওয়া পরিবারে এমন একটা সরকারি চাকরি ঈদের আনন্দকে হাজার গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে-সেই ভালো লাগাটা শামীমকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগাচ্ছে।