এক সময় বেকারিতে কাজ করা রিপন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায়
সংসারে অভাবে কারণে একাধিকবার স্কুল ছাড়তে হয়েছিল সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন্দ গ্রামের মো. রিপন মিয়াকে। কাজ করতে হয়েছে বেকারিতে, ঢাকায় সুতার কারখানায়। এরই মধ্যে ক্যানসারে মাকে হারান। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। শত বাধা অতিক্রম করে ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান। ভালো ফল করায় প্রথম আলোর সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি রিপনকে নিয়ে প্রতিবেদন পাঠান। পরে তার ভালো ফল ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল’ থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।
শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে অনেকটা নির্ভার হন রিপন। কারণ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার খরচ বেশি। বাবারও খরচ দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এমন সময় শিক্ষাবৃত্তি মনোবল শক্ত করার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। সেই মনোবলের কারণেই হয়তো এইচএসসিতেও সাফল্য ধরে রাখলেন তিনি। ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সিলেটের এম. সি. কলেজ থেকে পেলেন জিপিএ-৫। এখনেই শেষ নয়, এ বছর (২০২২-২৩ সেশন) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগে ভর্তির সুযোগও করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর এই সফলতায় স্নাতক পর্যায়েও ৪ বছর শিক্ষাবৃত্তি দেবে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল।
রিপন মিয়া বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই সংসারে অভাব দেখতে হয়েছে আমাকে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল ছেড়ে একটি বেকারিতে কাজ নিতে হয়েছিল। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময় ক্যানসারে আমার মা মারা যান। এরপর অভাবের কারণে বাড়ি ছেড়ে ঢাকার একটি সুতার কারখানায় কাজ নিতে হয়েছিল। এত কিছুর মধ্যেও আজকে আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগ ভর্তি হতে পেরেছি। আমার এ যাত্রায় ব্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার ইচ্ছা আছে, বিএসসি শেষ করে জার্মানি থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের প্রসেস ডিডাইনিং এবং পলিমার শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।’