ঈদের আনন্দ দ্বিগুন হলো অদম্য হাফিজুর রহমানের
ছোটবেলা থেকেই অভাব– অনটন ও দুঃখ কষ্টকে মোকবিলা করে বড় হয়েছেন হাফিজুর রাহমান আরাফাত। ঈদে আনন্দ ছিল না, ছিল শুধু দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহায় অন্যরকম অনন্দে ভেসেছেন তিনি। ২০২৩–২০২৪ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন হাফিজুর। আইন ও বিচার বিভাগে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার।
এ প্রসঙ্গে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল আইন ও বিচার বিভাগে পড়াশোনা করবো। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এবারের ঈদ তাই আমার কাছে অন্য রকম। বন্ধু–বান্ধবদের নিয়ে দারুন মজা করেছি। এবারের ঈদে শুধু আনন্দ ছিল, ছিল না দীর্ঘশ্বাস। এই আনন্দের মুহূর্তে আমি প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা না পেলে আমি এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না। এখন আমার একটাই প্রত্যাশা, ভালোভাবে পড়াশোনা করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা এবং সমাজের উন্নয়নে কাজ করা।’
হাফিজুর ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন। ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বৃত্তি পান তিনি। এই সময়েই হাফিজুরের মা রোজিনা আক্তার অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয়। এই সময় গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের ইজারা করা জমিতে হাফিজুরের পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় । হাফিজুর রহমানের বাবা মনিরুজ্জামান সরদার গৌরনদীতে রেডিও মেরামতের কাজ করে সংসার চালান
অভাবের সঙ্গে নিত্য সংগ্রাম করে ২০১৮ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাতেও সফল হয় হাফিজুর। বৃত্তি পায় সে। কিন্তু অভাবের কারেন পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তার। তখন স্কুলের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তাকে স্কুলে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। ভালো ফলাফল সত্ত্বেও কলেজে ভর্তি নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। হাফিজুরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ প্রদান করা হয় তাকে। বৃত্তি সহায়তায় পড়াশোনা করে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষায় সরকারি গৌরনদী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পান তিনি।
উল্লেখ্য, হাফিজুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের পথে আবারও পাশে দাঁড়িয়েছে ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট’। তিনি স্নাতক পর্যায়েও এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন।