অদম্য মেধাবী শিমুল হুসাইনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা পোলবাগুন্দায়। দুই ভাই বোনের মধ্যে শিমুল বড়। মা গৃহিণী, বাবা বর্গাচাষি। নিজেদের বসতভিটা ও সহায়-সম্পদ বলতে কিছুই নেই। বাবার রোজগারে সংসার চলত না। তাই নিজেও কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে পড়াশোনাটাও চালিয়ে গেছেন তিনি। এভাবে কঠোর পরিশ্রম করে ২০১২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান শিমুল। পরে প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে বৃত্তির জন্য আবেদন করেন প্রথম আলো ট্রাস্টে। তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও অদম্য মেধাকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।
শিক্ষাবৃত্তির সহায়তায় নিয়মিত ক্লাস ও পড়াশোনা করেন শিমুল। তার ফল পান হাতেনাতে। এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পান তিনি। তাঁর এই ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য বৃত্তি অব্যাহত থাকে স্নাতক পর্যায়েও। সেই নির্ভরতায় ভালো করে পড়াশোনা করে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচার বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। এই বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। দেড় বছর ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত হিসাব ভবনে মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অডিটর পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়াতে কর্মরত। ছয় মাস হলো এখানে বদলি হয়েছেন বলেন জানান। তিনি এখন তার পরিবারের হাল ধরেছেন।
প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত অনলাইন আয়োজন 'অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ এ পর্বের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন শিমুল হুসাইন। গত ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, বিকেল ৫টায় এ অনুষ্ঠানে তাঁর সফল হওয়া ও স্বপ্নের কথা জানালেন তিনি।
অডিটর পদে আছেন, কেমন লাগছে? এর উত্তরে শিমুল বলেন, ‘আমি কৃষিতে পড়াশোনা করেছি। এখন অডিটর পদে কাজ করছি। প্রথমে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন ঠিক হয়ে গেছে।
আজকের এই জায়গায় আসার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে শিমুল বলেন, ‘প্রথমে পড়াশোনা তেমন ভালো লাগত না। পরে ৪র্থ শ্রেণি থেকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় আমার। ৫ম শ্রেণিতে রোল হয় ২। পরে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। প্রথম আলোর প্রতিনিধি বাসায় আসেন, ছবি তোলেন, নিউজ করেন। ছবিসহ প্রতিবেদন ছাপা হয়। বৃত্তির ব্যবস্থাও করা হয় আমার জন্য। সেই বৃত্তির সহায়তায় ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছি। আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেনের আলো পড়াশোনা করতে হতো। বৃত্তি পেয়ে চিন্তামুক্ত হয়ে পড়াশোনা করি, আবার জিপিএ-৫ পাই উচ্চমাধ্যমিকে।’
পড়াশোনা যখন ভালো লাগতে শুরু করল তখন স্বপ্ন কেমন ছিল? এর উত্তরে শিমুল বলেন, ‘ছোটবেলায় কোনো স্বপ্ন ছিল না। কারণ আমি তো জানতামই না আমি পড়াশোনা করতে পারব। যা হোক সবার সহযোগিতায় পড়াশোনা করতে পেরেছি। এভাবে মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে হয়নি। পরে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিভাগে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গিয়ে স্বপ্ন দেখি বিসিএস দিয়ে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার। প্রথম বিসিএসে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় বাদ যাই। পরের গুলো দিচ্ছি। আশা করি হবে।’
বাবা-মায়ের অনুভূতি কি? উত্তরে শিমুল বলেন, ‘সরকারি চাকরি হওয়ার পর প্রথম যেদিন অফিসে যাই, ওনারা খুশিতে অনেক কান্না করেন। পরিবারের সবাই অনেক খুশি আমাকে নিয়ে। আরও ভালো কিছু করি, সেটাও চান তাঁরা।
নিজের স্বপ্নটা কি? এর ব্যাপারে শিমুল বলেন, ‘স্বপ্ন বলতে, ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে চাই। নিজ সমাজের যারা অদম্য আছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
মানসিকভাবে কোনোভাবেই ভেঙে পড়া যাবে না। শক্ত মনোবল নিয়ে এগোতে হবে—শিমুল হুসাইন।
কখনো সাহস হারিয়েন কিনা, মন খারাপ হয়েছে কিনা। এ ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘অনেকবারই হয়েছে। কলেজের সময় অনেক খারাপ সময় গেছে। তখন নাজিম ভাই অনেক সাহস দিয়েছেন, মোটিভেট করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি।’
এখন যারা অদম্য মেধাবী আছেন তাদের জন্য শিমুলে পরামর্শ হলো, ‘মানসিকভাবে কোনোভাবেই ভেঙে পড়া যাবে না। যেকোনো বিপদে প্রথম আলো ট্রাস্টে যোগাযোগ করে সমস্যার কথা বলবে—সমাধান পাবে। শক্ত মনোবল নিয়ে এগোতে হবে—ভালো কিছু হবেই। তা ছাড়া পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এটা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। ভালো করার জেদটা থাকতে হবে।’
সবশেষ শিমুল বলেন, ‘আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে যারা ছিলেন যেমন, আমার শিক্ষকগণ, মা-বাবা, প্রথম আলো ট্রাস্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আরও ভালো কিছু করতে চাই। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।
অনলাইন এই অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।