উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও সাফল্য ধরে রাখলেন অদম্য মোস্তাকিন

অদম্য মেধাবী মোস্তাকিন।

এইচএসসি পরীক্ষাতেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রুদ্রগাতি গ্রামের অদম্য মেধাবী মোস্তাকিন। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষাতে তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। তখন কথা দিয়েছিলেন এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাবেন, পেয়েছেনও। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পরে তাঁকে প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছিল।

 শিক্ষক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোস্তাকিন যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন তাঁর মা মারা যান। বাবা এক সময়ে দৈনিক মজুরিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করলেও অসুস্থতা ও বয়সের কারণে এখন ঘরে বসে আছেন। ফলে বাধ্য হয়ে মোস্তাকিনকে সংসার চালানো ও পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য টিউশনিসহ বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছে। তিনি পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মোস্তাকিন স্বপ্ন দেখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। তবে অভাবের সংসারে কীভাবে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন সে নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তিনি। মোস্তাকিন ২০২২ সালে নাড়িয়াগোদাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ‘সাঁথিয়ার তিন অদম্য মেধাবীর গল্প’ শিরোনামে মোস্তাকিনকে নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর মোস্তাকিনের লেখাপড়ার জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়।

 মোস্তাকিন বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার আগে নানা রকম কাজকর্ম করার পাশাপাশি পড়ালেখা করে জিপিএ-৫ পেয়েছি। পাশ করার পর কলেজে ভর্তির টাকা ছিল না। লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। এ অবস্থায় প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তির টাকা আমার খুব কাজে লেগেছে। পাশাপাশি কলেজে উঠে কিছুদিন টিউশনি করিয়েছি ও গ্রামে এসে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। এভাবেই আমি আজকের এই সাফল্যের দেখা পেলাম। আমি লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস (প্রশাসন) কাজ করে দেশের সেবা করতে চাই।’

 মোস্তাকিনের বাবা মাবুদ প্রামাণিক বলেন, ‘এখন আমি খুব একটা কাজকাম করব্যার পারি না। সংসারে অভাব। এমন অবস্থার মধ্যেও ছেলেটা আবারও ভালো ফল করিছে। এ জন্যে মনে খুব আনন্দ হতিছে।’

 উল্লেখ্য, প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর সহযোগিতায় মোস্তাকিনকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছিল।