‘গরবিনী মা’ সম্মাননা পেলেন অদম্য মেধাবী চন্দ্রশেখরের মা

‘গরবিনী মা’ সম্মাননা প্রাপ্ত মায়ের সঙ্গে অদম্য মেধাবী চন্দ্রশেখর চৌহান।
ছবি: প্রথম আলো।

বিশ্ব মা দিবসে বেসরকারি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১০ জন মাকে ‘গরবিনী মা-২০২৩’ সম্মাননা জানিয়েছে। এই ১০ জনের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত অদম্য মেধাবী চন্দ্রশেখর চৌহানের মা মিনা চৌহান একজন। ঠোঙা বানিয়ে ছেলেদের পড়াশোনা ও সংসার চালাতে সহায়তা করার সম্মানে এই পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁকে। গত রোববার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। দশমবারের মতো মায়েদের এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ অন্য অতিথিরা মায়েদের হাতে ক্রেস্ট, মেডেল, বিনা মূল্যে মাস্টার হেলথ চেকআপ প্যাকেজ, কাঠের মধ্যে খোদাই করা ছবিসহ নানা উপহার তুলে দেন।

মিনা চৌহানের স্বামী মানিক চৌহানের নিজস্ব কোন সহায়-সম্পদ নেই। গাইবান্ধা জেলা শহরের শণিমন্দির রোডের পাশে চার শতক অন্যের জায়গায় বসবাস। বাড়ির কাছেই শণিমন্দির রোড ঘেঁষে ফুটপাতে তাঁর চায়ের দোকান। দোকানে চা, পরোটা, পেয়াজু, শিঙারা বিক্রি করেন। সেই আয়ে ছেলেদের পড়াশোনা ও সংসার চলে না। তাই ঘরের মেঝেতে কাগজ দিয়ে ঠোঙা বানান মা মিনা চৌহান। সেই ঠোঙা দোকানে বিক্রি করেন। সেই অর্থে ছেলেদের পড়াশোনা বা সংসারে খরচ করতেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। দুই ছেলেকে এসএসসি পর্যন্ত পৌঁছাতে যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়েছে তাঁদের। পরে অবশ্য দুই ছেলের ভালো ফল ও তাদের পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। বৃত্তি পেয়ে নির্বিঘ্নে এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছে তারা। আজকে এই সময়ে দাঁড়িয়ে মিনা চৌহান বলতে পারেন, আমার এক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক, আরেক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

অনুভূতি প্রকাশ করে চন্দ্রশেখর চৌহান বলেন, ‘অন্যের জমিতে বসবাস করা বাবা চা-পরোটা বিক্রি করতেন। মা ঠোঙা বানাতেন। প্রথম আলো ট্রাস্ট, ব্র্যাক ব্যাংকসহ এ পর্যন্ত যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। এ পর্যন্ত সরকারসহ সবার কাছ থেকে শুধু নিয়েছি। এখন মা ও জন্মভূমির জন্য কিছু করতে চাই।’

সম্মাননা অনুষ্ঠানে সন্তানেরা মায়েদের সামনে তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
ছবি: প্রথম আলো।

যাঁরা এবার গরবিনী মা সম্মাননা পেলেন:

যশোরের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুলআলমের মা ফিরোজা বেগম; স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত খ্যাতিমান কিডনি প্রতিস্থাপন সার্জন অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলামের মা অধ্যাপক রহিমা খাতুন; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২ মো. শহীদুল ইসলামের মা রাবেয়া খাতুন; ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমানের মা সাহেদা রহমান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.মোহাম্মদআসিফ হোসেন খানের মা রওশন আরা বেগম; দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মার মা চঞ্চলা রানী শর্মা; জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী নুসরাতইমরোজতিশার মা শাহীনমাহফুজা হক; অভিনেতা ও অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক এম এম কামরুল হাসান রওনকের (রওনক হাসান) মা সামসুন্নাহার মজুমদার; জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক মোহাম্মদমাহমুদুল হক ইমরানের মা সেলিনা হক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক চন্দ্রশেখর চৌহানের মা মিনা চৌহান এবার সম্মাননা পেয়েছেন। এই মায়েদের ফুল দিয়ে ও উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।