ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি গ্রামের ছেলে মো. মাফিউল হাসান। এ বছর ভর্তি হয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে বিডিএস কোর্সে। টানাপোড়েনের সংসারে তাঁর এই সফলতা অন্যরকম মাত্র যোগ করেছে। চার ভাই, এক বোন ও মা-বাবাকে নিয়ে মাফিউল হাসানদের পরিবার। স্কুলশিক্ষক বাবার আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর গোলাম মোস্তফা হঠাৎ মারা যান। পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে মাফিউলের মা আরজিনা বেগম অথই সাগরে পড়েন। কোনো রকমে চলতে থাকে পরিবার। এ অবস্থায় কিভাবে মাফিউল সফল হলেন সেই গল্প ওঠে এল ১০ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।
বাবার অবর্তমানে সন্তানেরা হারিয়ে ফেলে তাদের চলার পথ। কিন্তু স্বশিক্ষিত মা আরজিনা বেগম মনোবল হারাননি। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। অদম্য চেষ্টা ও দৃঢ় মনোবল আরজিনা বেগমের যমজ তিন সন্তানকে এগিয়ে নিয়েছেন।
ছোটবেলার থেকে আজকের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নপূরণ নিয়ে মাফিউল হাসান বলেন, ‘ছোট থেকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। স্বপ্ন ছিল ভালো কিছু করব। সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাস, নতুন ক্লাস, নতুন স্যার—সব ভালো লাগছে। সব জায়গা থেকে সংবর্ধনার জন্য ডাকা হচ্ছে। এগুলো খুব ভালো লাগছে।২০০৯ সালে বাবা মারা যান, তখন অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের। মায়ের হাতে মানুষ হয়েছি, মায়ের হাতেই পড়াশোনার হাতেখড়ি।’
আমাকে ভালো কিছু করতে হবে, এই স্বপ্ন দেখার সাহসটা কই পেলেন? এর উত্তরে মাফিউল বলেন, ‘আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে জন্য ভালো করে পড়াশোনা করি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। প্রথম আলো থেকে ধুনট প্রতিনিধি মাসুদ রানা আংকেল যোগাযোগ করেন। বিস্তারিত জেনে নিউজ করেন। পরে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। এই বৃত্তির জন্যই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।’
এই সফলতার বিষয়ে মায়ের অনুভূতি কি জানতে চাইলে বলেন, ‘মা অনেক খুশি, ছেলে মেডিকেলে পড়াশোনা করে ভালো ডাক্তার হবে এটাই তাঁর প্রত্যাশা। তা ছাড়া আমরা যমজ তিন ভাই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম। তিনজনকেই বৃত্তি দেওয়া হয়। বৃত্তি পেয়ে এইচএসসিতে আমি ও রাফিউল জিপিএ-৫ পাই, সাফিউল জিপিএ-৪.৯২ পায়। রাফিউল ও সাফিউল দুজনেই দুইটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে দুজনেই আগামী বছর আবার মেডিকেলে পরীক্ষা দেবে।’
ডাক্তার হওয়ার পরের স্বপ্ন কি? এ সম্পর্কে মাফিউল বলেন, ‘এখনো চিন্তা করিনি। তবে বিসিএস দিয়ে সরকারি চিকিৎসক হব, এফসিপিএস করব।’
যমজ তিন ভাইয়ের সফলতায় প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানান, ‘সবাই অনেক খুশি। আমরা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে পড়াশোনা করেছি, প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি—এটাকে ভালোভাবেই দেখেন সবাই।’
খারাপ সময়গুলো কিভাবে মোকাবিলা করলেন, এ সম্পর্কে মাফিউল জানান, ‘কমবেশি সবাই হতাশ হয়। মনে হয় আমার দ্বারা হবে না। আমারও তাই হয়েছে। তবে চেষ্টা করেছি, দেখি কি হয়। প্রথম আলোর বৃত্তিটা মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছে, যার কারণে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করতে পেরেছি। সবার সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছি।’
এখন যারা অদম্য মেধাবী আছে তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে মা্ফিউল বলেন, ‘এইচএসসির সময়টা অনেক কম। সিলেবাস বড়। তাই রুটিন মাফিক এগোতে হবে। প্রথম থেকেই সময় ব্যবস্থাপনা করতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস, ভরসা রাখতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন এই অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।