অদম্য মেধাবী মোছা. আফসানা মিমির বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর দলপাড়া গ্রামে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন সম্প্রতি। আফসানার বাবা মো. আজিয়ার রহমান দিনমজুরি করে ৪ সদস্যে পরিবার চালাতেন। তাঁর মাসিক আয় ৬ হাজার টাকা বেশি নয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাবা মৃত্যুতে পরিবার আরও ভেঙে পড়ে। গৃহিণী মা এসমোতারা দিশেহারা। এই সময়ে আফসানার বড় ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি বর্গাচাষ শুরু করেন। তার সামান্য আয়ে চলছে সংসার।
পরিবারের এমন অবস্থায়ও দমে যাননি আফসানা। অদম্য চেষ্টা ও মনোবল নিয়ে পড়াশোনা করে মানবিক বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জন করেন। একই সঙ্গে ২০২২-২৩ সেশনে রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় বর্ষের শেষ পর্যায়ে অধ্যয়নরত। তিনি অনুরণ-প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিজের এ পর্যন্ত আসার সংগ্রামের মিমি বলেন, আমি ২০২০ সালে ৪.৭২ নিয়ে এসএসসি পাস করি। এরপর ২০২০ সালে বদরগঞ্জ সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হই। ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করি। আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে দিনমজুরির কাজ ঠিকমতো করতে পারতেন না। ওই সময়টাতে আমার লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ছিল। তখন আমি এলাকায় টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচটা চালিয়েছি। পরে আমাকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে পাশে দাঁড়ায় অনুরণ-প্রথম আলো ট্রাস্ট। এখন আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। উল্লেখ্য, আমার বাবা গত বছর সেপ্টেম্বরে মারা যান।’
আফসানা মিমি জীবনে নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। তাঁদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার পাশাপাশি তথ্য ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করা এবং একাডেমিক কাজে সহায়তার জন্য ২৮ জুন প্রথম আলো কার্যালয়ে ল্যাপটপ প্রদান করা হয়। অনুরণের সহায়তায় বৃত্তি পাওয়া ৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে এই ল্যাপটপ। মহতী উদ্যোগে প্রথম আলো ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য অনুরণের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
ল্যাপটপ পেয়ে আফসানা জানান, ‘ল্যাপটপ পেয়ে আমার অনেক সুবিধা হলো। আমার একাডেমি অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন তৈরি এবং অনলাইন ক্লাস করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ল্যাপটপটি। আমি অনুরণ ও প্রথম আলো ট্রাস্টকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই আমাকে পড়াশোনায় আর্থিকভাবে সাহায্য করা এবং ল্যাপটপ দেওয়ার জন্য।’