সাক্ষাৎকার

প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্নের পথে অদম্য মৃদুল

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে’। এই আয়োজনে আমরা সেই অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে কথা বলি যিনি তার আর্থিক, সামাজিক ও পারিবারিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন সফল হয়েছেন, নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনি একজন অদম্য মেধাবীকে নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বেলা ৩টায় আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের এ পর্বের অতিথি ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের ছেলে অদম্য মেধাবী মৃদুল পাল। ছোটবেলা থেকেই দরিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করছেন। আর্থিক সংকটের কারণে কলেজে পড়া নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও জ্ঞান অর্জনের অদম্য ইচ্ছার কারণে মৃদুল পাল হয়েছেন সফল। তিনি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্বপ্ন তাঁর বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত হওয়া। তাঁর জীবনের নানা বিষয় নিয়ে উক্ত অনুষ্ঠানের আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। সাক্ষাৎকারটি অনুলিখন করেছেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. নাজিম উদ্দিন।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনি বগুড়াতে পড়াশোনা করছেন সমাজ কল্যাণ বিভাগে। সবার আগে আপনার স্বপ্নের গল্পটা জেনে নিতে চাই। এই যে আপনি সমাজকর্ম বিভাগ থেকে পড়াশোনা করছেন, আপনার তো নিশ্চয়ই একটা স্বপ্ন আছে যে এই কাজটা করতে চান, এই ভালো কাজটা বা দেশের জন্য, পরিবারের জন্য, নিজের জন্য। সেই স্বপ্নটা কী?

মৃদুল পাল: স্বপ্নটা আসলে সেভাবে দেখা হয়নি। তবে হাই স্কুলে থাকতে এক স্যারের অনুপ্রেরণায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। সেদিন থেকে চাওয়া ছিল যে, আমি নিজেকে সেভাবেই তৈরি করব। সুতরাং এখন আমার স্বপ্ন হলো বিসিএস দিয়ের কোনো উচ্চ পদে গিয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

এবার একটু আপনার ছোটবেলার গল্পে ফিরে যেতে চাই। ছোটবেলাটা কেমন ছিল? একদম ছোটবেলা থেকে আপনার কোনো স্বপ্ন ছিল কিনা? বা আপনি আসলে কিভাবে বড় হয়েছেন? সেই গল্পটা একটু শুনতে চাই।

মৃদুল পাল: ছোটবেলা বলতে আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়তাম, আমার বোন মায়ের পেটে, তখন আমার বাবা মারা যান। তখন থেকে আমার মা এবং আমি মামার বাড়িতেই বড় হয়েছি। মামার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তবুও ওখান থেকে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। তবে আমাদের শিক্ষকেরা এবং পরিবার—সবাই অনেক সাহায্য করত। তাদের সাহায্যেই আমি লেখাপড়া চালিয়ে গেছি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

এভাবে একদমই অল্প বয়সে জীবনের এই বাস্তবতা বা একটা প্রচণ্ড ধাক্কার মধ্যে দিয়ে গেলেন। তারপর আপনি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। আপনার কি কখনো মনে হয়েছে যে জীবনে তো অনেক পরীক্ষা দিলাম, আর পরীক্ষা দেওয়ার সাহস নাই, সাহস হারিয়ে ফেলেছি?

মৃদুল পাল: না, এ রকম কখনো মনে হয়নি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

একটা ক্লাস থ্রি-এর বাচ্চা যার ভরসায় আসলে মা, সেই ছেলেটা এতটা সাহস, এতটা মনোবল কিভাবে পেলেন?

মৃদুল পাল: আসলে আমি ইন্টারমিডিয়েট পাস করে অনার্সে ভর্তি হই। তখন অনেকেই বলেছে যে,২ টা জিপিএ-৫ পেয়ে সমাজকর্মের মতো একটা বিভাগে হলো কেন। তখন থেকেই একটা মনোবল পাওয়া যে, আমাকে আরও ভালো কিছু করতে হবে। তখন থেকেই আমার লক্ষ্য যে, ভালো করে পড়াশোনা করে বিসিএস দেব। সেই মনোবলটা বা সাহসটা আমার আছে।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনার এই স্বপ্নের ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাটা কেমন?

মৃদুল পাল: আমি আমার ক্যারিয়ারের দিকে যেটা আমার পছন্দ সেটা আমি আমার মায়ের সঙ্গে শেয়ার করি। মা সব সময় আমাকে সাপোর্ট করেন। সব সময় বলেছেন যে, তোমার যেটা ভালো, সেটাই করো। মা যখন অনেকের কথা শোনেন, মন খারাপ করেন। তখন আমি তাঁকে বোঝাই যে, আমি কোথায় কোন বিভাগে পড়ছি—এটা কোনো ফ্যাক্টর না। আমি নিজেকে কীভাবে তৈরি করব, সেটা বড় বিষয়। তবে মা অনেক সাপোর্ট করেন সব সময়।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

এখন যারা অদম্য মেধাবী আছে, তারা তো একটা স্বপ্ন দেখছেন। তাদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে কিনা।

মৃদুল পাল: স্বপ্ন সত্যি করতে গেলে নিজের বাস্তবতা আগে মানতে হবে। বাস্তবতা, নিজের অবস্থান দেখে বা নিজের অ্যাবিলিটি দেখে তার ওপর আসলে কতটুকু আমি পারি বা পারি না, কতটুকু আমার শিখতে হবে—এগুলো সবই খেয়াল রাখতে হবে। যার বেসিকটা ভালো না, তাকে পুরাটাই খাটতে হয় এই অনার্স পাসের পর থেকে। একদম শুরু থেকেই তাকে তাহলে জেনে নিতে হবে যে, তার ইচ্ছাটা কী। সেই ইচ্ছাটা পূরণের জন্য তার কি কি দক্ষতা আছে, যে দক্ষতা নাই, সেই দক্ষতাগুলো পূরণের জন্য তাকে চেষ্টা করে যেতে হবে।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনি তো সমাজকর্ম নিয়ে পড়ছেন, সেখানে সমাজ, সমাজের নানা রকম তত্ত্ব, থিওরি এসব বিষয়গুলো নিয়ে পড়ানো হয়। সমাজকর্মে পড়ে আপনি কি উদ্যোক্তা হতে চান?

মৃদুল পাল: সত্যি কথা বলতে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো স্বপ্ন কখনো ছিল না। আসলে আমি ওই যে বললাম, আমার ইচ্ছা হচ্ছে সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস প্রশাসনে যাওয়া। ওটাই আমার স্বপ্ন।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনার এই স্বপ্নটা যে পরিষ্কার, এই পরিষ্কার স্বপ্নটা থাকাটাও জীবনের একটা অর্থবহ বিষয় বলে আমি মনে করি। আপনার সামনের দিনগুলোর জন্য শুভকামনা।

মৃদুল পাল: আপনারও ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।