কুপির বাতিতে পড়ে নির্বাহী প্রকৌশলী অদম্য নুরুজ্জামান...

অদম্য মেধাবী মো. নূরুজ্জামান।

বাবা ছিলেন রিকশা চালক। স্বল্প আয়। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ এই ছিলো সংসারের অবস্থা। সেই পরিবারে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া ছিল বিলাসিতার নামান্তর। কিন্তু শত অভাব অনটনে মুষড়ে পড়েননি তিনি। পড়াশোনা ছাড়েননি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. নূরুজ্জামান।  সম্প্রতি তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি সম্পন্ন করে দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

ছোটবেলা থেকে আজকের প্রকৌশলী হওয়ার গল্পটা গত ১২ ডিসেম্বর ২০২২ প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অভাবের কারনে একটা সময় মনে হয়েছিলো, পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে পারব না। ষষ্ঠ শ্রেণিতে যখন পড়ি তখন বাসা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের স্কুলে ১ বছর হেঁটে গিয়েছি। একটা সাইকেল কেনার সামর্থ্যও ছিল না। ওই বয়সে হেঁটে যাওয়া…। বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না, কুপির বাতিতে পড়তাম। কেরোসিন যাতে কম ফুরায় সে জন্য দিনের আলোতে পড়তাম।’

বাঁধার  পাহাড় ডিঙ্গিয়ে নিজের চেষ্টায় ২০১১ সালে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে পড়াশোনা কীভাবে করবেন তা নিয়ে নুরুজ্জামান পড়েন শঙ্কায়। পরবর্তী সময়ে তাঁর অদম্য মেধা ও ইচ্ছা শক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য তাকে নির্বাচন করা হয়। বৃত্তিপ্রাপ্ত নুরুজ্জামান উচ্চমাধ্যমিকেও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য ধরে রাখেন। এই সফলতার জন্য তাঁকে স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তির আওতায় রাখা হয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে (২০১৩-১৪) সেশনে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় এই বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন।

সম্প্রতি তিনি মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল ফ্রি ও ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ নিয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি (মাস্টার্স) শেষ করে দেশে ফিরেছেন। পরিবারের হাল ধরার জন্য শুরু করেছেন চাকরিও। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

গত ৩ মে ২০২৩ অদম্য মেধাবী নুরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘স্বপ্নের কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। আমি ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এখন দেশের বাইরে কোন নামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। পিএইচিডি সম্পন্ন করতে পারলে পেশাগত জীবনেও পরিবর্তন আসবে। আমার আর্জিত শিক্ষা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে বিনিময় করতে চাই। শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থেকে তা করা সম্ভব ।’