ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষা বৃত্তিপ্রাপ্ত অদম্য মেধাবী লাবনী আক্তারকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তিনি গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিতে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে যোগদান করেছেন। লাবনী আক্তার অদম্য মেধাবী হিসেবে স্বীকৃতি পান তার অসাধারণ শিক্ষা ও জীবনসংগ্রামের মাধ্যমে। দারিদ্র্য এবং পারিবারিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তিনি এসএসসি এবং এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জন করেন। পরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ নার্সিং কলেজ থেকে সম্প্রতি বিএসসি ইন নার্সিং শেষ করেন। লাবনীর মা তাঁকে সমর্থন করার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ান, যার জন্য তিনি ২০২৪ সালে ‘গরবিনী মা’ সম্মাননা লাভ করেন।
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এই সম্মাননার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে লাবনীর জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা আজ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা বিস্তারে সব সময়ই বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমরা লাবনীর মতো মেধাবীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে গর্বিত। তার সংগ্রাম ও সাফল্য আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা।’
এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র লাবনীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে না, বরং অন্যান্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।
লাবনী জানান, ইউনিভার্সেলের মতো স্বনামধন্য একটা হাসপাতালে চাকরির সুযোগ পেয়েছি এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি এই সুযোগটাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাব, নিজেকে অরও অভিজ্ঞ করে তুলব। নতুন অনেক কিছু শিখে নিজেকে কম্পিটেন্ট করে তুলব।’
লাবনী মায়ের অনুভূতি জানাতে চাইলে জানান, ‘আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। আজকে বড় হাসপাতালে স্থায়ী একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। আমি এখন স্বস্তিতে নিশ্বাস নিতে পারব। আমার আশা, আমার মেয়ে মানুষের সেবা করবে এবং অনেক ভালো কিছু করবে। সবাই দোয়া করবেন ওর জন্য।’
লাবনীর বাবা লুৎফর রহমান শিপে মালামাল ওঠা-নামার কাজ দেখাশোনা করতেন। এতে করে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ২০০১ সালে হঠাৎ তিনি মারা যান। তখন লাবনীর বয়স ১১ মাস, বড় বোন শিল্পীর বয়স দুই বছর, বড় ভাই ৮-১০ বছর হবে। এমন অবস্থায় মা বেবী বেগম তিন সন্তানকে নিয়ে অকূলপাথারে পড়লেন। সন্তানের খাওয়া-পড়ার খরচ পাবেন কোথায়? নিজেদের কোনো জমি-জিরাত নেই। ছোট্ট যে ঘরটাতে ভাড়া থাকেন, তার ভাড়া দেবেন কীভাবে? বেবী বেগম কখনো দিনমজুর, কখনো হোটেলে ধোয়ামোছার কাজ করলেন। ভোর থেকে রাত অবধি হাড়ভাঙা খাটুনি। সন্তানদের প্রতি তাঁর একটাই কথা ছিল-ঠিকমতো পড়াশোনা করতে হবে। মাকে দেওয়া কথা রাখল লাবনী। এসএসসি পরীক্ষায় মোংলার টিএ ফারুক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান তিনি। বোন শিল্পী আক্তারও একই স্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে পাস করেন। ভালো ফল ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় লাবনীর পাশে দাঁড়ায় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। তাঁকে দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তি। এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন লাবনী।