বাবা-মা অনেক যুদ্ধ করেছন সংসার চালতে। কিন্তু আমাকে বুঝতে দেননি। বাবা মুলত টিউশনি করে সংসার চালাতেন, মা সেলাই কাজ করতেন। তাঁরা অনেক কষ্ট করেছেন। ছোটবেলায় বুঝতে পারিনি। বুঝতে পেরেছি যখন আমি টেনে উঠি। কারণ যে বছর আমি টেনে উঠি সে বছর বাবা এক গাড়ি দূর্ঘটনায় দীর্ঘ সময়ের জন্য অচল হয়ে পড়েন। থমকে পড়ে সব কিছু। সংসারে কীভাবে চলবে, আমার পড়াশোনাই বা কীভাবে চলবে। ঠিক এই সময়টাতে আমি বুঝতে পারি তাঁরা কত কষ্ট করে সব চালাতেন—বললেন ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত ডা. গৌরব মজুমদার বিক্রম।
পরক্ষণেই গৌরব বলেন, ‘অভাবের মধ্য দিয়েও আমি এসএসসিতে ভালো ফল করি এবং অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনিত হই। এটা আমাকে দারুণভাবে সহায্য করে। পরে এইচএসসি ও এমবিবিএস পাস পর্যন্ত এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তা পেয়েছি।
টানাপোড়েনের সংসার থেকে কীভাবে চিকিৎসক হলেন গৌরব মজুমদার, এখনই বা কি করছেন— এ সবকিছু নিয়ে গৌরব তাঁর জীবনের নানা গল্প উঠে আসে ১৫ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার, বেলা ৩টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।
গৌরব মজুমদার ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে এইচএসসি ও এমবিবিএস পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। এইচএসসি পাসের পর ২০১৪-১৫সেশনে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। এখান থেকে এমবিবিএস পাস করে ৪২তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) সহকারী সার্জন পদে সুপারিশকৃত হন। পরে চূড়ান্ত গেজেটে অন্তর্ভক্ত হয়ে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। বর্তমানে গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন হিসেবে কর্মরত।
নিজের স্বপ্নের জায়গায় অটল থাকতে হবে। সব কিছুর মধ্যে পরিশ্রম। পরিশ্রম করলে সফল হবেই।
অসচ্ছল হয়ে অসচ্ছলদের ডাক্তার হওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে গৌরব মজুমদার জানান, ‘আমি বর্তমানে সরিকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন হিসেবে আছি। গৌরনদী থেকৈ ১ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে ওখানে যেতে হয়। এই ইউনিয়নের লোকজন টাকা খরচ করে উপজেলা বা জেলায়ে যেতে পারে না। তাদেরকে এখন আমার উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছি। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি সহকারি সার্জন বা মেডিকেল অফিসার পোস্ট তৈরি করে আমাদের এ সব প্রত্যন্ত এলাকায় পাঠাচ্ছেন। যার দরুণ এই দরিদ্র মানুষজন ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন। তাই সব কিছু মিলে ভালো লাগে। এই অসহায় মানুষদের কাছে যেতে পারছি, তাদের সেবা দিতে পারছি।’
মা-বাবার অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে গৌরব মজুমদার বলেন, ‘আমি যখন বাড়ি যাই, তখন বুঝি তাঁরা অনেক খুশি। তাদের আশা পূরণ করতে পেরেছি। বাবা অনেক স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। আমি বাবাকে দেখে অনেক অনুপ্রাণিত হই।’
ছোট অদম্যদের জন্য কি পরামর্শ দেবেন? এ ক্ষেত্রে গৌরব মজুমদার বলেন, ‘নিজের স্বপ্নের জায়গায় অটল থাকতে হবে। সব কিছুর মধ্যে পরিশ্রম। পরিশ্রম করলে সফল হবেই। যারা আমার মতো প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতা পেয়েছে তাদের বলব, আসলে জীবনের প্রতিটি স্টেজ কোনো না কোনো শিক্ষা দিয়ে যায়। যদি একটা যুদ্ধে হেরে যাই তবে পরের স্টেজে কি অপেক্ষা করছিল সেটা দেখা যায় না। তাই সকল অদম্য মেধাবীদের বলব—জীবনে সাফল্য দেখতে হলে যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে হবে। তবেই সফল হওয়া যাবে। আমাকে যেমন আমার শিক্ষকগণ বিনা মূল্যে পড়িয়েছেন। সর্বদা সহযোগিতা করেছেন। আসলে যদি নিজের ইচ্ছাটা থাকে তাহলে সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনো পথ দেখিয়ে দেবেনই। তাই সাহস হারানো যাবে না।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন এই অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।