আরবী খাতুনের বাবা একজন কৃষক। তার মা সেলিনা বেগম গৃহিণী। মাত্র দেড় বিঘা জমি রয়েছে তাদের। দিনাজপুরের মুকুন্দপুর, বিরামপুরে তাদের বাড়ি। তারা তিন বোন এবং বাবা- মা সহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কিন্তু শত কষ্টের মাঝেও মেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়ে কখনো হাল ছাড়েননি তার বাবা আব্দুল আলিম। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বড় মেয়ে আছিয়া খাতুনকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরই বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাই মেজ মেয়ে আতিয়া খাতুন এবং ছোট মেয়ে আরবী খাতুনকে লেখাপড়ার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা চালিয়ে গেছেন। ফলে মেজ মেয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ করে এখন স্নাতকোত্তর পড়ালেখা করছে। আর ছোট মেয়ে আরবী খাতুন ২০১৯ সালে এসএসসি তে গোল্ডেন জিপিএ নিয়ে বিরামপুর সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে ২০২১-২২ সেশনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ভর্তির সুযোগ পান।
আরবী খাতুন বলেন, ' আমি প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক হতদরিদ্র শিক্ষার্থী। আমরা তিন বোন।বড় বোন বিবাহিত। আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত। ১ম সেমিস্টারের রেজাল্ট এখনও দেয়নি।আমার বাবা সংসার খরচের পাশাপাশি আমাদের পড়াশোনার খরচ অনেক কষ্টে দেয়। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ইসলামী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে মাসিক ও সাপ্তাহিক কিস্তি বহন করতে গিয়ে পড়াশোনার খরচ দেওয়া আরও কষ্টকর হয়ে গেছে।অনুরণ-প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা আমার পাশে না দাঁড়ালে আমার বাবার পক্ষে আমার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। এখন আমার পড়াশোনার খরচ নিয়ে আমার বাবাকে এতটা চিন্তা করতে হয় না। আমার ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করার খুব ইচ্ছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই। আমার মতো হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের আমি সাহায্য করতে চাই। আমার গন্তব্যে সফল হওয়ার জন্যে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।’
স্বপ্নবাজ আরবী খাতুন জীবনে নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। তাঁদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার পাশাপাশি তথ্য ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করা এবং একাডেমিক কাজে সহায়তার জন্য ২৮ জুন প্রথম আলো কার্যালয়ে ল্যাপটপ প্রদান করা হয়েছে। অনুরণের সহায়তায় বৃত্তি পাওয়া ৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে এই ল্যাপটপ। মহতী উদ্যোগে প্রথম আলো ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য অনুরণের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।