কুড়িগ্রামের অদম্য মেধাবী বেহেস্তমা খাতুন। ছোট থেকেই পড়াশোনায় তাঁর প্রবল আগ্রহ। কিন্তু বাদসাধে পরিবারের অসচ্ছলতা। বাবা দোকানে দোকানে গিয়ে বস্তা কিনে বিক্রিকরে সংসার চালাতেন, মা সেলাই কাজ করতেন। অভাবে সংসারে মেয়েকে পড়াশোনা করানো কঠিন ছিল। তাই এসএসসির পর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলে। কিন্তু বেহেস্তমা তাতে হার মানেনি। টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এর মধ্যে এসএসসির ফল প্রকাশ হয়। পেয়ে যান জিপিএ-৫। কিন্তু পরিবারে আনন্দ নেই। ভর্তি হতে পারবেন কিনা, নাকি বিয়ের পিঁড়িতেই বসতে হয় তাকে—এমন দুশ্চিন্তায় ছিলেন বেহেস্তমা। তখন প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি তাদের বাড়ি যান, সব শুনলেন, প্রতিবেদন করলেন প্রথম আলোয়। তাঁকে দেওয়া হয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি।
বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করে ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পুনরায় শিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখা হয় তাঁর। ভালো করে পড়াশোনা করে ২০১৩-১৪ সেশনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি কুড়িগ্রাম সদরে টালানাপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
বেহেস্তমার ভাষায়, ‘ছোট থেকে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু যখন বড় হতে থাকলাম, ধীরে ধীরে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে থাকলাম। একদিকে বাবা-মার অসচ্ছলতা, অন্যদিকে পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা। তখন মনে হতে থাকল—আমি কি পারব? কারণ বাবা দোকান থেকে বস্তা কিনে বিক্রি করতেন। এই অল্প আয়ে ৫ জনের সংসার চালানো কঠিন। তখন মা কাগজ দিয়ে ঠোঙা বানিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে সেলাই মেশিন কেনেন। পরে সেলাই করে কিছু আয় করতেন। এভাবেই চলেছে সংসার। আমি আজকে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটা সম্ভব হয়েছে আমার বাবা-মা, শিক্ষক এবং অবশ্যই ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিলের কারণে। তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আমার গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের কোনো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গেছে—আমার মনে পড়ে না। এখন অনেকই আমার কাছে আসে পরামর্শ নিতে। তখন ভালো লাগে।